নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারি খাল দখল করে পুকুর কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে চারটি বিলে মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে উপলশহর, বিনোদশাহ, বিষ্ণপুর ও লক্ষীপুর এলাকার তিন ফসলি প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমিতে এখন কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বিলপাড়ের প্রায় অর্ধশত বাড়ির উঠান ও ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়ে। ফলে এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে উপলশহর বাবুপাড়ায় সরকারি একটি খাল দখল করে দুটি পুকুর খনন করা হয়। খননের সময় পুকুরের পাশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো নালার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে চারটি বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রতি বছর বর্ষায় এসব বিলে পানি জমে থেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং আড়াই হাজার বিঘার মতো জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এতে করে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় দুটি বিদ্যালয়ের মাঠও বছরের প্রায় ছয় মাস পানির নিচে থাকে, ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বর্ষা হলে বিলপাড়ের অনেক বাড়ির উঠান ও ঘরের মেঝেতে এক হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়, তখন পরিবারগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বিল জুড়ে থৈ থৈ পানি আর তার ওপরে ঘন কচুরিপানা ও জলজ আগাছা। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়।
উপলশহর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, “বিলে আমাদের কয়েক ভাই মিলে ৪৫ বিঘা জমি আছে। এই জমির ধানে সারা বছরের খাবার হতো, অতিরিক্ত ধান বিক্রিও করতাম। কিন্তু এখন কয়েক বছর ধরে এক ছটাক ধানও পাই না।”
অন্য এক কৃষক, আব্দুল শহীদুল ইসলাম মাখন বলেন, “পুকুর খনন করে দখল করা খাল উদ্ধার করে, অল্প কিছু জমি অধিগ্রহণ করে পানি নিষ্কাশনের নালা করে দিলেই হাজার হাজার বিঘা জমি আবার আবাদযোগ্য হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে বারবার আবেদন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
স্থানীয় গৃহবধূ সোনিয়া খাতুন বলেন, “বাড়ির উঠানজুড়ে পানি, ঘরের চারপাশেও পানি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব বিপদে আছি।”
উপলশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, “কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে কয়েক মাস বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে ডুবে থাকে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”
বড়াইগ্রাম উপজেলার ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে আলোচনা চলছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এএইচ/আরএন