Sunday | 26 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Sunday | 26 October 2025 | Epaper
BREAKING: নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে: রিজওয়ানা হাসান      দেশে মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার, ঢাকায় ৫১৬৩ ডলার      ‘মিথ্যা মামলায় নিজামী, মীর কাসেম ও সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে’      ইলিশ শিকার: ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ, সমুদ্রে যাচ্ছেন ৫০ হাজার জেলে      বিমানবন্দরে আগুনের ঘটনা তদন্তে আসছে ৪ দেশের বিশেষজ্ঞ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এনসিপি      শান্তি ও সহযোগিতার বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে: ড. ইউনূস      

মুরাদনগরে ধর্ষণ: দ্রুত সত্য প্রকাশ

Published : Monday, 7 July, 2025 at 5:18 PM  Count : 84

ভাই ছোট হলেও চাতুরিতে বড়। বড় ভাইকে ফাঁসিয়ে প্রমাণ দিলেন তিনি শেয়ান নয়, মহাশেয়ান। বড় ভাই ফজর আলীকে টক অব দ্য কান্ট্রি বানিয়ে কেবল ফাঁসালেন না, গোটা দেশকেই প্রায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন ছোট ভাই শাহপরান। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষতায় দ্রুত জানা গেল কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘটা দেশ কাঁপানো সেই ঘটনার ফের। বড় ভাই ফজরের ওপর শোধ তুলতে কী নিপুন কৌশলে হিন্দু নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ান ছোট ভাই পরান। তোলপাড় ঘটিয়ে দেন গোটা দেশে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে এ ঘটনা। আর পাশের দেশ ভারত ছড়িয়ে আরো রসিয়ে রসিয়ে। দেশটি মুখিয়েই থাকে এমন কিছুর জন্য। গুজব-গুঞ্জনের জন্য এমন রসদই তো চাই ভারতের। গত ক’টা দিন এ নিয়ে কী চর্চাই না হয়েছে। হেন বাজে কথা নেই, যা চর্চিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব ১১–এর আভিযানিক দল কুমিল্লার বুড়িচং থানাধীন কাবিলা বাজার এলাকা থেকে পাকড়াও করে গুনধর ছোট ভাই শাহপারানকে। ধরে উত্তমধ্যম দেয়ার আগেই শাহপরান গড়গড় করে জানিয়ে দেয়, বড়ভাই ফজর আলীর ওপর শোধ নিয়েছে সে। সেই নারীকে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছে স্যোশালমিডিয়ায়। এতে সমাজের, দেশের কী হয়েছে, তা তার ভাবনার বিষয় নয়। ফজরকে জনমের শিক্ষা দিতে পেরেছে, এটাই তার মোটাদাগের বিশাল প্রাপ্তি। বড় ভাই ফজর আলীকে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুষ্টু কাজে তারা দুই ভাইই বড্ড পাকা।

এই সহোদর ফজর-পরান দীর্ঘদিন ধরে ওই নারীকে কখনো একা, কখনো যুগলভাবে উত্ত্যক্ত করতো। তবে, তাদের মধ্যে বনিবনা ছিল না। এটাসেটা নিয়ে গোলমাল লেগেই থাকতো। ঘটনার মাস দুয়েক আগে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জেরে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতিও হয়। এ নিয়ে গ্রাম্য সালিসও হয়। সালিশের মাঝে ফজর আলী কয়েক ঘা চড়থাপ্পড় কষিয়ে দেয় শাহ পরানকে। শাহ পরান সেদিন কুলাতে পারেনি। শোধ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে। ছুঁতা খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে এসে যায় সেই সুযোগ। সালিসের কিছুদিন পর ওই নারীর মা ফজরের কাছ থেকে সুদের বিনিময় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। পাওনা টাকা চাইতে মাঝেমধ্যেই রাতবিরাতে তার ওই বাড়িতে যাতায়াত, খায়খাতির। ঘটনার দিন ২৬ জুন নারীর মা–বাবা বাড়িতে ছিলেন না। ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের ছুঁতায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে কৌশলে ওই নারীর শোয়ার ঘরে ঢোকে পড়ে। একা পেয়ে যা করার করেও। গোপন সূত্রে খবরটি জেনে যায় গ্রামের রমজান, কালাম, অনিক, আরিফ, সুমনরাও। দেরি না করে তারাও দরজা ভেঙে ওই ঘরে ঢোকে। ওই নারীর শ্লীলতাহানি করে। অশ্লীল ভিডিওচিত্রও ধারণ করে। শাহ পরান দ্রুত সেটি স্যোশালমিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ক্যারিশমা দেখায়। কুকর্মে মিল থাকলেও এই পাণ্ডাদের মধ্যে কিছু বিরোধ ছিল। তাদের মধ্যে কালামের আগে থেকে ফজর আলীর সঙ্গে শত্রুতা ছিল। ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আবুল কালামসহ অন্যদের কাজে লাগায় শাহ পরান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশ থেকে কিছু লোক এসে ফজর আলীকে বেদম পেটায়। এ সময় ওই নারীকেও বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ সবেরও ভিডিও করা হয়। নাটকের ওপর নাটক। ততক্ষণে  শাহ পরান, কালাম ও অন্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরদিন ২৭ জুন মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। ঘটনার সারসংক্ষেপ এটুকুই। 

কিন্তু, দুই ভাই ও কয়েক পাণ্ডার এই কীর্তিকাহিনী মুরাদনগরে সীমানা পর্যন্ত থাকেনি। প্রধান আসামি ফজর আলীর দলীয় পরিচয় নিয়ে ঠেলাঠেলিসহ গোটা দেশের রাজনীতির এক কদাকার দিক আবার প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে বিবেকবানদের। যে যা পেরেছেন, বলেছেন। গণমাধ্যমে সংবাদের ঝড় বয়েছে। টক শো গরম হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বড় বড় দলের শীর্ষ নেতাদের পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। চলেছে দোষারোপ, পরস্পরকে ঘায়েলের চেষ্টাও। আর সমানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে গালমন্দ। কতো যে কথা। বলা হয়েছে, কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে ৫ আগস্টের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যেত। ৫ আগস্টের পর সে মিশে গেছে বিএনপিতে। বিষয়টা ধর্ষণের মতো কুকর্মের। কিন্তু,কর্ম বাদ দিয়ে রাজনীতি টেনে আনার কুপ্রবণতা। এলাকার রাজনীতিতে ফজর আলী একটি সুবিধাবাদী চরিত্রের প্রতীক। সেটা হয়ে থাকলেও কি ধর্ষণ বৈধ বা জায়েজ? একজন ধর্ষণকারী বা অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আনা প্রকারান্তরে অপরাধকে সেকেন্ডারি বা সাই লাইনে ফেলে দেয়া। ধর্ষণ বা বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও চিত্র অনেক মানুষকেই আলোড়িত করে। কারো কারো মধ্যে এ সব দেখায় এক ধরনের সুখানুভূতিও রয়েছে।

মুরাদনগরের ঘটনায় যে দুটি মামলা হয়েছে, দুই মামলায় ফজর আলীসহ পাঁচজনকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করেছে, ভিডিও ফুটেজ ছড়ানোর হোতা শাহপরানকে পাকড়াও করেছে- এসব আলোচনায় আসছে না। গুরুত্ব পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষতা। তার চেয়ে ছড়ানো ছিটানো ফুটেজ দর্শনই যেন বিনোদনের। রুচির এ দুর্ভিক্ষ ক্রমশ মানুষকে আসক্ত করে তুলছে।

আদালতকে বলতে হয় এসব ছবি সরানোর ব্যবস্থা করতে। গণমাধ্যমকে নির্দেশ দিতে হয় ধর্ষিত বা নিগৃহিত নারীর ছবি না ছাপতে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান কী বলে? এ ধরনের বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার অপেক্ষা রাখে? নূন্যতম বিবেকসম্পন্ন কারো কি রুচিতে দেবে তা দেখার? এমন নির্মম ঘটনার পর রাজনৈতিক দলগুলো যখন একে অন্যের দিকে দায় চাপানোর চেষ্টা করে, তখনই এই সুযোগ কাজে লাগায় অপরাধীরা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অপরাধীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। একজন ধর্ষণকারীর পরিচয় শুধুই অপরাধী। অতীতের ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এসব ঘটনার পরই অপরাধীর দলীয় পরিচয় নিয়ে একধরনের নোংরা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে, যা মোটেই কাম্য নয়।

এসব করে তারা আইনকে তার নিজের গতিতে চলতে বাধা দেন। পুলিশকে একটা ধাঁধায় ফেলে দেন। কুমিল্লার এ ঘটনায়ও তা স্পষ্ট। পুলিশের কাছে কাছে অপরাধীদের পরিচয় শুধুই অপরাধী। তাদের প্রয়োজন হয় না অপরাধীর দলীয় পরিচয়ের। যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে টানাটানি করা মানে তাকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া। আগে-পরে কোনো সত্যই লুকানো থাকে না। মুরাদনগরের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছিল, ঘটনা যেভাবে প্রচার হচ্ছে বাস্তব তা নয়। এর ভেতর অনেক ফের আছে। রং মাখানো ব্যাপার আছে।

মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে দেখা গেছে, ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপিত হিন্দু নারী ও অভিযুক্ত মুসলিম যুবক ফজর আলীর মধ্যে আগে থেকেই কিছু অন্য রকম বিষয়আসয় রয়েছে। তা এলাকার অনেকের জানা ছিল এবং পূর্বেও এ নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। তারপরও বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে মহলবিশেষ একে “ধর্ষণ” হিসেবে প্রচার চালায়। যা দেশে একটি বাজে পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি কনটেন্ট ব্যবসার প্রসার ঘটায়। যা দিয়ে ফায়দা লোটার দুয়ার খোলে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের ভিত্তিও নষ্ট করে। বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে পরিণত করার চক্রান্ত মূলত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের একটি নীলনকশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এ সময়ের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এরপরও এ নিয়ে মতলবী প্রচারণা কেবল অবিবেচক ও দেশবিরোধীদের পক্ষেই সম্ভব।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close