হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য চার দেশের বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজ ও ই-গেট পরিদর্শনের পর এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, কার্গো ভিলেজ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চারটি দেশের বিশেষজ্ঞ টিম আনা হচ্ছে। ইংল্যান্ড, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও চীন থেকে বিশেষজ্ঞরা আসছেন। তারা এসে তদন্ত করে দেখবেন এখানে কোনো অব্যবস্থাপনা ছিল কিনা। তারা তদন্ত করে কারণ ও দায় নির্ধারণে সহায়তা করবেন।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরে আগুন লাগার সাথে সাথে তাদের নিজস্ব চারটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পাশাপাশি দিয়াবাড়ি, কুর্মিটোলার ফায়ার সার্ভিস ২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসে। গার্মেন্টসের কাঁচামাল ও ধাতব পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আমরা ভেবেছিলাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লেগেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিমানবন্দরের ই-গেট খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা অনেক কষ্ট করেন। তাদের পাসপোর্ট ফি কমানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। ফায়ার সার্ভিস ফেল করেনি। তারা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ করেছে। এয়ারপোর্ট অথরিটির চারটি ইউনিট চার মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার ব্রিগেডের ইউনিটগুলোও ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আসে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কারণ ওই জায়গায় খাদ্যপণ্য বেশি ছিল, কেমিক্যাল নয়।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেট স্থাপন দ্রুত চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত ভোগান্তি কমাতে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, যে ফায়ার ইউনিট বিমান পরিচালনার জন্য থাকে, সেটি কার্গো ভিলেজেও কাজ করতে পারে—এতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন আমরা বাসায় যে পোশাক পরি, প্রয়োজনে তা পরে আত্মীয়ের বাড়িতেও যাওয়া যায়।
এ সময় সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে কার্গো ভিলেজে লাগে। ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে একাধিক সংস্থা। এখন পর্যন্ত তিনটি পৃথক তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি আগুন লাগার কারণ তারা খতিয়ে দেখবে।
প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে আমদানি কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নেভাতে। কেন আগুন নেভাতে এত সময় লাগল– এর পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। সেগুলো হলো– উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য বস্তুর আধিক্য, স্টিল স্ট্রাকচারের তাপ শোষণ, অপরিষ্কার ও গাদাগাদি পরিবেশ, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং ছোট ছোট স্টিলের স্ট্রাকচার কেটে ভেতরে প্রবেশ করায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।
আরএন