অভাবের সংসার ছেড়ে একটু সুখের দেখা পেতে গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজায় চাকরি নিয়ে ভালোই ছিলেন ময়না বেগম। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ, কে জানতো জীবনে নেমে আসবে চরম দুর্দশা। রানা প্লাজা ধসে জীবন বেঁচে গেলেও, আহত হয়ে এখন জীবন যুদ্ধে হারতে বসেছে ময়না বেগম।
রানা প্লাজা ধসে ভূমিহীন ময়না বেগম মারাত্মক ভাবে বুক, পেট ও পায়ে আঘাত পেয়ে সেসময় ঢাকার সাভারে এনাম মেডিকেলে সরকারি ভাবে চিকিৎসা নিয়ে দুমাস পর বাসায় ফিরে অর্থের অভাবে তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় তার চিকিৎসা সেবা। মানুষের কাছে হাত পেতে কচ্ছপ গতিতে কিছুটা চিকিৎসা হলেও, অর্থাভাবে বর্তমানে পুরোপুরি তা বন্ধ। আহত ময়না বেগম রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঙালপাড়া গ্রামের মো. বাবু মিয়ার সহধর্মিনী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অসুস্থ ময়না বেগম একটি ঘরে গাদাগাদি করে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে থাকেন। চিকিৎসার অভাবে প্রতিনিয়তই ছটফট করছেন ব্যথা আর যন্ত্রণা নিয়ে। ময়নার ছলছল চোখ বলছে একটু সুখের আশায় গিয়ে যেন মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি, এমন যন্ত্রণার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। অনেকে অনেক রকম সাহায্য সহায়তা পেলেও, তেমন কোনো সহায়তা পাননি ময়নার পরিবার। ৪ জনের সংসারে ময়নার স্বামী বাবু একাই টানছেন সংসারের ঘানি। এনজিওর ঋণ আর মানুষের পাওনা টাকার কাছে যেন স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছেন পরিবারটি। ছেলে আর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যুক্ত হয়েছে তার নতুন ঝামেলা, তারাও আলাদাভাবে খাচ্ছেন। এখন বুড়ো-বুড়ি পড়েছেন বেকায়দায়। ময়নার স্বামী বাবু তিনি ও বয়সের ভারে হয়ে পড়েছেন অসুস্থ। তবে কিছুদিন থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে শুরু করেছেন ময়না। এছাড়া আর কোনো সরকারি বা বেসরকারি ভাতা পায় না ওই পরিবারটি।
এসব বিষয়ে আহত ময়না বেগম বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে চিৎকার অভাবে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। এমন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই যেন ভালো। আল্লাহ কত মানুষকে দেখতে পায়, কিন্তু আমাকে দেখতে পায় না।
আহত ময়না বেগমের বয়স্ক স্বামী মোঃ বাবু বলেন, আমার পঙ্গু কার্ড আছে তাতেও কোনো ভাতা পাই না। টাকা খরচ করে তৈরি করেছি এখন সেটাও কাজে আসছে না। আমার স্ত্রীর চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে বাসায়ই খাবার দাবারও নাই। বয়স্ক মানুষ কোথায় যাব কি করব বুঝতে পারছি না। মানুষের আর কাজেও ডাকে না।
আহত ময়নার প্রতিবেশী হাফেজ আলী বলেন, আমিও গরিব মানুষ অনেক সময় ওদেরকে খাবার দাবার দেই টাকা পয়সা থাকলে দিতাম ওরা অনেক কষ্টে থাকে সরকার যদি ওদেরকে সাহায্য করতো তাহলে ওরা একটু ভালো থাকতো।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, আমরা তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিবো। এছাড়াও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য সহায়তা করা হবে।
আরএইচএফ/এসআর