অনেকে জানতে চান, তাঁর জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে—দলিল মূলে, না উত্তরাধিকার মূলে? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে জমির ড্রাফট বা খসড়া খতিয়ানে।
বাংলাদেশে জমির মালিকানা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের একই প্রশ্ন: “এই জমি আমার নামে রেকর্ড হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসলে কী মূলে রেকর্ড হলো?” কারণ, রেকর্ড থাকা মানেই মালিকানা নিশ্চিত নয়। অনেক সময় ভুলবশত জমির রেকর্ড অন্য কারও নামে হয়ে যেতে পারে। আইন অনুযায়ী, জমির রেকর্ড একটি প্রমাণপত্রমাত্র—সরকারি কাগজে জমি কার নামে আছে, তা উল্লেখ থাকে। কিন্তু এই রেকর্ডের মূল ভিত্তি কী? দলিল, না উত্তরাধিকার? সাধারণত এই দুই ভিত্তিতেই জমি রেকর্ড হয়ে থাকে।
১। দলিল মূলে রেকর্ড: যদি আপনার পূর্বপুরুষ বা আপনি নিজে জমি ক্রয় করে থাকেন, তবে সেই ক্রয় দলিলের ভিত্তিতেই জমি রেকর্ড হয়ে থাকে। ড্রাফট খতিয়ানে তখন স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে—কোন দলিল নম্বর, কোন তারিখে, এবং কোন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলটি নিবন্ধিত হয়েছে।
উদাহরণ: ড্রাফট খতিয়ানে লেখা থাকতে পারে—“দলিল মূলে রেকর্ড নং ১৫৪৩/১৯৭৫, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: কুষ্টিয়া সদর।” এই তথ্যই প্রমাণ করে, আপনার জমির রেকর্ড একটি বৈধ ক্রয় দলিলের ভিত্তিতে হয়েছে।
২। উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড: যদি আপনার দাদা বা বাবা জমির মালিক হন, কিন্তু কোনো দলিল না করে থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া হয় জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে এসেছে—অর্থাৎ পৈতৃক সম্পত্তি। ড্রাফট খতিয়ানে তখন লেখা থাকবে—“উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড।”
এই ক্ষেত্রে, জমির বণ্টন না হওয়া পর্যন্ত সব উত্তরাধিকারীর যৌথ অংশীদারিত্ব বজায় থাকে। অনেকেই ড্রাফট খতিয়ান না দেখে শুধুমাত্র বর্তমান খতিয়ান হাতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যান, কিন্তু পরে সমস্যায় পড়েন। কারণ, আজ আপনার নামে রেকর্ড থাকলেও, কাল অন্য কেউ দাবি করতে পারে— “এই জমি আমার দাদার ক্রয় দলিলের ভিত্তিতে রেকর্ড হয়েছিল।” তাই শুরুতেই ড্রাফট খতিয়ান দেখে নেওয়া জরুরি।
ড্রাফট খতিয়ান পাওয়া যায়: ইউনিয়ন ভূমি অফিসে, উপজেলা ভূমি অফিসে, জেলা রেকর্ড রুমে সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা থাকবে—“দলিল মূলে” নাকি “উত্তরাধিকার মূলে”।
করণীয়: যদি দলিল মূলে রেকর্ড হয়: দলিলের কপি সংগ্রহ করে রাখুন। যদি উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড হয়: উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে (বণ্টননামা দলিল করে) রেকর্ড সংশোধন করুন। যদি কোনো ভুল বা অসঙ্গতি পান: ভূমি অফিসে আবেদন করুন বা প্রয়োজন হলে আদালতের আশ্রয় নিন।
গুরুত্বপূর্ণ মনে রাখুন: ড্রাফট খতিয়ান ছাড়া কখনোই বোঝা যাবে না, জমির রেকর্ড দলিল মূলে হয়েছে, নাকি উত্তরাধিকার মূলে। ড্রাফট খতিয়ানই জমির আসল ইতিহাস জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নথি।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, জমির মালিকানা প্রমাণ হয়—দলিল, দখল ও রেকর্ড এই তিনটির সমন্বয়ে।
যেমন: রেকর্ড থাকলেও দলিল না থাকলে মালিকানা দুর্বল হয়। শুধু দলিল থাকলেও, রেকর্ড যদি অন্য কারও নামে হয়, তাহলে বিরোধের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী,
আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ.ডি. ফেলো।
আরএন