মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণকারী ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “যারা সত্যিকারের অপরাধ সংঘটিত করেছে, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছে। এই অফিসাররা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং তারা নির্দোষ। আমরা আশা করি, তারা আদালতের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।”
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হাজির করার পর শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইনজীবী সরোয়ার হোসেন। ট্রাইব্যুনাল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে, তাদের ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, “সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অ্যাপ্রুভার হিসেবে বলেছেন, যা কিছু হয়েছে, তা শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এই কর্মকর্তাদের ওই ঘটনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।”
প্রসিকিউশন দাবি করেছে, সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা জানি তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে তারা পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে আত্মসমর্পণ করেছেন, সেটিকে বলা হয়েছে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না। আগে সেনাসদর ব্রিফিংয়ে বলেছিল, তারা আর্মি হেফাজতে ছিলেন।”
এর আগে আজ সকালে, আদালত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে নেওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে থাকা কারা কর্তৃপক্ষের সবুজ রঙের প্রিজন ভ্যানে তাদের তোলা হয়, যা পরে ট্রাইব্যুনাল এলাকা ত্যাগ করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন: র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা এবং দুটি গুমের মামলায় অভিযুক্ত এই সেনা কর্মকর্তাদের বুধবার সকাল ৮টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর তিন মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সকাল সোয়া ৭টায় কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে ১৫ জন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। সাড়ে ৭টায় তাদের প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা ও দুটি গুমের মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন মোট ৩২ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালকও।
৮ অক্টোবর অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন পুলিশ মহাপরিদর্শককে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও পরোয়ানার অনুলিপি পাঠানো হয়। বুধবার কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিন ছিল।
আরএন