Thursday | 23 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Thursday | 23 October 2025 | Epaper
BREAKING: শেখ হাসিনাকে শাস্তি না দিলে শহীদ-আহতদের প্রতি অবিচার হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল      সাইফ ও সৌম্যর রেকর্ড জুটিতে ২৯৭ রানের লক্ষ‍্য দিল বাংলাদেশ      দেশকে এগিয়ে নিতে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল      টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ      সহজেই জয় পেল অস্ট্রেলিয়া      ইসরায়েলের পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাস      জেনেভা ক্যাম্পে দু'গ্রুপের সংঘর্ষে যুবক নিহত      

পেশাবিহীন রাজনীতিবিদ: লাইসেন্সপ্রাপ্ত চাঁদাবাজ

Published : Friday, 1 August, 2025 at 3:55 PM  Count : 772

রাজনীতি এক সময় ছিল একটি স্বপ্নের নাম। দেশ গড়ার, জাতি জাগানোর, মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার এক মহৎ প্রত্যয় ছিল রাজনীতির মূলমন্ত্রে। সেই রাজনীতির পথিকরা ছিলেন শিক্ষক, কৃষক, আইনজীবী, চিকিৎসক কিংবা সংস্কৃতিজীবী—যাঁরা নিজেদের পেশাগত জীবনের ভিত্তিতেই রাজনীতির ভূমিতে পা রাখতেন। রাজনীতি ছিল তাদের কাছে জীবনের লক্ষ্য নয়, ছিল দায়বদ্ধতার প্রকাশ। কিন্তু সময় বদলে গেছে। রাজনীতি এখন আর সে পথে চলে না।

আমরা এখন এমন এক রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসে দাঁড়িয়েছি। যেখানে রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে নিয়েছে একদল ‘পেশাবিহীন রাজনীতিবিদ’। যাঁদের নেই কোনো নিজস্ব উপার্জন, নেই কর্মজীবনের গৌরবময় ইতিহাস, নেই জনমানসের আস্থা—তবে আছে দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজির লাইসেন্স, আছে সিন্ডিকেটের অংশীদারিত্ব, আর আছে রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছায়ায় বেঁচে থাকার অঘোষিত নিরাপত্তা।

যিনি নিজেই কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত নন, যিনি জীবনে কোনোদিন নিজের ঘামে দুটো পয়সা উপার্জন করেননি, তিনি কীভাবে সমাজ পরিবর্তনের কথা বলবেন? কীভাবেই বা তিনি রাজনীতির মহান চেতনাকে ধারণ করবেন? অথচ বাস্তবতা হলো, এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন অসংখ্য মুখ দেখা যায়, যাঁরা শুধুই পদধারী—কোনোদিন কোনো কাজ করেননি, করতেও চান না। তাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে নেই জনগণের কথা, নেই দেশের দুর্দশা, নেই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সমাজের প্রয়োজনীয়তা।

এই শ্রেণির রাজনীতিবিদের কাছে রাজনীতি একটি আয়ের উৎস। তাঁরা রাজনীতির মাঠে থাকেন ‘কমিশন’ পাওয়ার আশায়, পদ পান ‘নেটওয়ার্ক’ দিয়ে, এবং অর্থ কামান 'সুযোগ' কাজে লাগিয়ে। যারা দল করে ঠিকাদারি ভাগায়, রাস্তাঘাটের কাজের বিপরীতে মাসিক ভাতা নেয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য চালায়, এমনকি রমজানে ইফতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, কোরবানির হাটে পশুর মাথাপিছু চাঁদা তোলে—তাঁদের কি আদৌ রাজনীতিবিদ বলা চলে?

একের পর এক চাঁদাবাজির গল্প শুনি, দেখি। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর—সবখানেই ‘ভাইয়ের লোক’ পরিচয়ে চাঁদা তোলার মহোৎসব। অনেকে দলের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম চালায়, ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, অথবা চাঁদা না পেলে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। এই সমস্ত ঘটনাগুলো আমরা জানি, প্রশাসন জানে, পুলিশ জানে, এমনকি দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন। তবুও কেউ কিছু করেন না। কারণ, এরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার কাছাকাছি।

এই চিত্রটা শুধু একটা দলের নয়—প্রায় সব দলেই এখন এমন মানুষ আছেন যারা রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন, অথচ নিজের জীবনে একটি সৎ পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে পারেননি। এটা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক সংকেত। কারণ, যারা নিজের জীবনে স্বচ্ছভাবে বাঁচেনি, তারা অন্যের জীবন বদলাবে কীভাবে?

রাজনীতির মূল জায়গাটা যখন পেশাহীন মানুষের হাতে পড়ে যায়, তখন দুর্নীতি আর অন্যায়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে একদল ‘লাখপতি পেশাহীন কর্মী’। তাদের আয়ের উৎস নেই, কর দেন না, কিন্তু মাসে লাখ টাকার গাড়ি চালান, অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কেনেন। তারা রাজনীতিকে করেছে পণ্যের মতো—যেখানে পদ মানে টাকা, মনোনয়ন মানে চুক্তিপত্র।

কিন্তু এইসব পেশাবিহীন রাজনীতিবিদরা কেন দলে সুযোগ পায়? কারণ, দলগুলো এখন আর ত্যাগী, চিন্তাশীল, জনবান্ধব রাজনীতিক তৈরি করে না। তারা তৈরি করে একদল ‘কাজের লোক’, যারা চাঁদা তুলবে, মিছিল-মিটিংয়ে লোক জোগাড় করবে, প্রয়োজনে প্রতিপক্ষকে হেনস্থা করবে—তাদের পুরস্কার স্বরূপ দেওয়া হয় ইউনিট কমিটির পদ, মনোনয়নের প্রতিশ্রুতি অথবা সরকারি বরাদ্দে অংশীদারিত্ব।

এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশ কখনো নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্ব পাবে না। রাজনীতি হবে কেবল চাঁদাবাজ আর সুবিধাবাদীদের অভয়ারণ্য। রাজনীতি থেকে আদর্শ হারাবে, সমাজ হারাবে মূল্যবোধ।

আমাদের ভাবতে হবে—রাজনীতি কি শুধুই কিছু পেশাহীন লোকের জন্য? শিক্ষিত, কর্মঠ, পেশাদার মানুষ কেন রাজনীতিতে থাকবে না? কেন রাজনীতিকে আমরা এমন একটি জায়গায় পরিণত করব, যেখানে পেশা থাকলে বঞ্চিত হতে হয়, আর চাঁদাবাজ হলে পদবঞ্চিত হওয়া যায় না?

সমাধান একটাই—রাজনীতিতে পেশাগত নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা। মেধাবীদের রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়া। রাজনীতিকদের নিয়মিত আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। যার পেশা নেই, তাকে রাজনীতি করার আগে কর্মজীবনে প্রবেশ করতেই হবে। যারা নিজের জীবনের জন্য দায় নিতে পারেন না, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় কীভাবে দায়বদ্ধ হবেন?

সব দলের উচিত, পেশাজীবী ও মেধাবীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো। কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক—এই শ্রেণির মানুষদের রাজনীতির মূলধারায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট আর দখলদারি বন্ধে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

আজ প্রয়োজন সৎ, কর্মনিষ্ঠ, সমাজবান্ধব নেতৃত্ব। যিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতি করেন, তিনিই জানেন সমাজের ভিতরটা কেমন। যিনি কৃষক, তিনিই জানেন বাজারের বাস্তবতা। যিনি পেশাজীবী, তিনিই জানেন কর দেওয়ার দায়। সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়েই রাজনীতিতে অবদান রাখতে হবে।

রাজনীতি পেশাবিহীনদের হাতে থাকলে দেশ অচিরেই পেশাহীনতার দুঃস্বপ্নে ডুবে যাবে। আর সে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে আদর্শ, সত্য আর জনগণের ভরসা।


সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), 
রোজী মোজ্জাম্মেল মহিলা কলেজ, গুরুদাসপুর, নাটোর।


আরএন



LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close