পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া গ্রামে স্ত্রী ও শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী। সোমবার (৫ মে) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের খান বাড়িতে এই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন চম্পা বেগম (৩৫) এবং তার মা বিলকিস জাহান (৫৫)। চম্পা বেগম মোহাম্মদ আলী খানের মেয়ে এবং বিলকিস জাহান তার স্ত্রী। ঘটনার পরপরই ঘাতক স্বামী বাদল খান (৪৫) পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধাওয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে ও ধাওয়া বাজারের মুদি দোকানি বাদল খানের সঙ্গে তার চাচাতো বোন চম্পা বেগমের মাত্র ২০ দিন আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই চম্পার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। বিয়ের আগেও বাদল আরও তিনটি বিয়ে করেছিল। যেখানে বর্বরতা ও নির্যাতনের কারণে তার আগের তিন স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যান।
সোমবার রাত ১১টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে বাদল তার স্ত্রী চম্পা বেগম ও বৃদ্ধ শাশুড়ি বিলকিস জাহানকে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশ দুটি ঘরের মেঝেতে ফেলে দিয়ে হত্যার আলামত নষ্ট করতে লেপ-তোশকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় ঘরে থাকা বাদলের দ্বিতীয় স্ত্রীর ১০ বছর বয়সী শিশু ছেলে ইয়াসিন (হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী) ঘর থেকে পালিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি জানান। প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লাশ দুটির আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাদল পালিয়ে যায়।
নিহত চম্পা বেগমের ফুফাতো বোন নাছিমা বেগম জানান, “ইয়াসিনের কাছ থেকে ঘটনাটি শোনার পর আমি সাথে সাথে বাদলের ঘরে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, চম্পা ও তার মায়ের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে এবং তাদের ওপর কাপড়চোপড় দিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে। তখনও বাদল ঘরে ছিল, তবে প্রতিবেশীরা আসার শব্দ পেয়ে সে পালিয়ে যায়।”
প্রতিবেশী ফাহিম সিকদার জানান, “মা-মেয়ের লাশ দেখে আমি পুলিশে খবর দেই। রাতেই পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে।” পরে পুলিশ বাদল খানের ছেলে ইয়াসিনকে হেফাজতে নেয়।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ আবু নাসের জানান, “লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা প্রকৃত আসামিকে শনাক্ত করেছি। তাকে খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। সিআইডি টিম ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছে। বিজ্ঞানের সহায়তায় প্রকৃত দোষীকে শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ আনোয়ার জানান, “মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী দ্রুত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।”
আরএম/আরএন