গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে তড়কা রোগ (অ্যানথ্র্যাক্স)। পশুবাহিত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। এ উপসর্গ নিয়ে মারাও গেছেন রোজিনা বেগম নামের এক নারী। কিন্তু সে তুলনায় নেই সচেতনতা ও চিকিৎসা। ফলে চরম উৎকন্ঠায় দিনরাত কাটছে সুন্দরগঞ্জবাসীর।
সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গবাদিপশুর অ্যানথ্র্যাক্স মোকাবেলায় কিছু কিছু এলাকায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সচেতনতা বাড়াতেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৮০ পয়সায় ভ্যাকসিন এখনো ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৯০ শতাংশ গবাদিপশু এখনো ভ্যাকসিনের বাহিরে আছে। এ পর্যন্ত ১৩ টি গরু অ্যানথ্র্যাক্সে মারা গেছে। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক। এ উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা মারা গেছেন। আরও আক্রান্ত ২২ জন। দাফতরিক হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ জন হলেও ৫০ ছাড়িয়েছে দাবি সচেতন মহলের।
এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যানথ্র্যাক্সের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এ উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন। এমতাবস্থায় চরম আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউপি সদস্য ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কেবলমাত্র সচেতনতা। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যকর ভূমিকা এখনো দেখছি না। পশু হাসপাতালের কোনো লোককেও আমার ওয়ার্ডে দেখিনি।
বেলকা ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪ জন অসুস্থ ব্যক্তিকে পরামর্শ দিয়েছি। তাদের কেউ সহজে স্বীকার করেননি। তথ্য পেতে রাগারাগিও করেছি অনেকের সাথে। লজ্জা এবং ভয় দু’টোই দেখেছি তাদের চোখেমুখে।
অপরদিকে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোজিনা বেগমের ছেলে রইসুল মিয়া চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, অসুস্থ মাকে গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আমার মাকে কোনো ডাক্তার বা নার্স ছোঁয়নি। ডাক্তার এসে দূর থেকে ছবি তুলেছেন। কিন্তু মাকে নাড়ানাড়ি আমরাই করেছি। পরে ফোঁড়া স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে রংপুর নিতে বলেন। একজন রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের যে আচরণ হওয়া দরকার সেটি আমরা পাইনি।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা মারা যাওয়ার পর থেকে গবাদিপশুর ভ্যাকসিন দিচ্ছে জোরেসোরে। তবে জনবল কম হওয়ায় আগাতে পারছেন না। জনবল আরও বাড়ানো দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক মো. রইসুল মিয়া বলেন, রোগী রোজিনা বেগম যখন ভর্তি হয় তখন মেডিকেল আবাসিক অফিসার ও এমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার দু'জনে তাকে দেখেছেন। যদি নাই দেখতো তাহলে চিকিৎসা দিলো কিভাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, এ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আরও এক লাখ চেয়ে আবেদন করেছি। খুব দ্রুত সময়ে সেগুলো পাবো।
প্রচার-প্রচারণা চলছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, অসুস্থ গরু জবাই করার কারণে একজনকে ভ্রাম্যমাণ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৮ টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টিএইচজে/ এসআর