বাগেরহাটের মোংলায় হঠাৎ করে মাদককারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মাদককারবারীদের এজেন্টদের হাত হয়ে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে সেবীদের হাতে। সহজে মাদক হাতে পাওয়ায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকরা, মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান অভিযান না থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তবে থানা পুলিশের অভিযানে মাঝে মধ্যেই আটক হচ্ছে মাদক সেবী ও কারবারীরা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, চট্টগ্রাম থেকে একটি বড় মাদকের চালান মোংলা-খুলনা মহাসড়কের কাটাখালী হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করবে। এরপর চালানটি ভাগ করে বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হবে।
এ তথ্যের ভিত্তিতে মোংলার বিভিন্ন প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। গভীর রাতে দিগরাজ এলাকায় একটি মাহিন্দ্রা গাড়িতে তল্লাশির সময় শফিকুল হাওলাদার নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮৮৬ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান জানান, আটক শফিকুল হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের লক্ষ্য হচ্ছে মাদক কারবারের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা। এর আগে, ৪ অক্টোবর দুটি পৃথক অভিযানে আরও তিন মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ।
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ— এসব অভিযান সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্য।
শহরের সামসুর রহমান সড়কের বাসিন্দা হাজী আবদুল মান্নান মোল্লা বলেন, “প্রায় সময় রাস্তা-ঘাটে উঠতি বয়সী যুবকদের মাদক সেবন করে মাতলামি করতে দেখা যায়। অনেকে আবার নিজেরাও সেবন করে, আবার বিক্রিও করছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মাছ বিক্রেতা, ভ্যানচালক, পুরাতন লোহালকড় বিক্রেতা। পেশার আড়ালে তারা প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ পিস ইয়াবা বিক্রি করছে।”
মাদ্রাসা রোডের বাঁশ বিক্রেতা নারগিস জানান, “পৌরসভার সব ওয়ার্ডেই কয়েকজন মহিলা রয়েছেন, যারা নিজেদের বাড়িতে খুচরা ইয়াবা বিক্রি করছেন। তারা বড় পাইকারদের কাছ থেকে ১০-১৫ পিস ইয়াবা কিনে এনে ১-২ পিস করে বিক্রি করেন। প্রতিটি পিসে তারা ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাভ করেন। সহজে আয় করা যায় বলে অনেকে এই পথে ঝুঁকে পড়ছে।”
মাদ্রাসা সড়কের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, “খুচরা ইয়াবা বিক্রেতারা প্রথমে উঠতি বয়সী যুবকদের মাদক সেবনে অভ্যস্ত করে তোলে, এরপর তাদের কাছে চড়া দামে মাদক বিক্রি করে। এতে করে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, “যখন মোংলায় মাদকের এমন ছড়াছড়ি চলছে, তখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো কার্যক্রম না থাকায় আমরা হতাশ।"
জেইউ/আরএন