মুন্সীগঞ্জ-চাঁদপুর সীমানায় মেঘনার শীর্ষ নৌডাকাত চক্রের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে মেঘনার নৌপথ। মেঘনা-ধলেশ্বরী নদীতে চাঁদাবাজি, চোরাকারবারি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। মেঘনায় গোলাগুলিতে দুইজন নিহত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে মেঘনা এখন কিছুটা শান্ত। কিন্তু নৌ-ডাকাতদের তৎপরতা থামেনি। আবারও ডাকাতরা সক্রিয় হয়ে ওঠছে যেকোন সময়-এমন ধারণা নৌ-পথ যাত্রী ও মেঘনা-ধলেশ্বরী তীরের বাসিন্দাদের। মেঘনায় গোলাগুলিতে শীর্ষ ডাকাত কানা জহিরের ও তার গ্রুপের ডাকাত সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ৯ দিন পরও মেঘনার শীর্ষ ডাকাত কানা জহির ও তার গ্রুপের কোন সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করতে পারেনি।
কানা জহির গং মেঘনা ও তার আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
গত ৩০ জানুয়ারি রাতে মেঘনায় উত্তোলিত চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নৌ-পুলিশ ও কানা জহির গংয়ের দুইপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়কালে দুইজন নিহত হয়। এ ঘটনার ৫ দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি ডাকাত বাহিনীর প্রধান জহিরুল ইসলাম কানা জহিরকে প্রধান আসামী করে চাঁদপুরের মতলব থানায় মামলা হয়। এ মামলার বাদী হয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাষানচর গ্রামের নিহত রাসেল ফকিরের মা আনোয়ারা বেগম। সীমানা জটিলতার কারণে হত্যাকান্ডের পাঁচদিন পর এই মামলা হয়। মামলায় নৌ-ডাকাত জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নাম উল্লেখ ও ১২-১৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। এরপরও থেমে থাকেনি কানা জহিরের অপরাধের সাম্রাজ্যে।
দুইটি হত্যাকান্ডের পরদিন ৩১ জানুয়ারি সকালে আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা নারী পিংকিকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করা হয়। একই দিন বিকেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মেঘনার শীর্ষ জলদস্যু কানা জহিরকে আসামি করে ৫ জনের নামে মামলা করা হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা মামলার বাদী হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী শাহনাজ বেগম পিংকির স্বামী সম্রাট বেপারী।
এরপর ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাজে বাঁধা, গুলি করে হত্যার চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে শীর্ষ ডাকাত জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরসহ ১৪ জনের নামে পৃথক দু’টি মামলা করা হয়। সদর উপজেলার চরআব্দুল্লাহ নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে মামলা দু’টি দায়ের করেন।
এর আগে ১লা ফেব্রুয়ারি বিকেলে সদর উপজেলার কালীরচর গ্রামে পুলিশ ও মেঘনার নৌ-ডাকাত জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহির বাহিনীর মধ্যে এ গুলি বিনিময় হয়। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে ডাকাতদল পালিয়ে গেলে ১১ টি ককটেল, ১ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১ টি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার ও ডাকাত দলের ব্যবহৃত একটি স্পিডবোট জব্দ করে পুলিশ।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ শহর লাগোয়া ধলেশ্বরী নদীতে চোরাকারবারি ব্যবসা জমজমাটভাবে চলছে।
পুলিশ জানায়, কানা জহিরের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ ২৭ টি মামলা রয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া ও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন থানায়। তার বাহিনীর প্রধান কালিরচর গ্রামের মামুন, জুলহাসহ ১৫-২০ জনের একটি ডাকাত বাহিনী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। মেঘনার জলদস্যুদের আটকে অভিযান চলছে বলে পুলিশের একাধিক অফিসার জানিয়েছেন।
এসআর