Wednesday | 22 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Wednesday | 22 October 2025 | Epaper
BREAKING: কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জামায়াতের, জানালেন প্রধান উপদেষ্টাকে      সেন্টমার্টিন ভ্রমণে মানতে হবে ১২ নির্দেশনা      কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি      আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, অপরাধীরা পালিয়েছে: আইনজীবী      বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, চেয়েছে নিরপেক্ষ ভূমিকা: আইন উপদেষ্টা      শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ      নাইজেরিয়ায় জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে নিহত ৩৮      

সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে ভরাট হচ্ছে সরকারি খাল

Published : Monday, 1 September, 2025 at 9:32 PM  Count : 160

যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তড়ান্বিত করতে ১৮০ ফুট প্রশস্ত হচ্ছে গাজীপুর-মদনপুর এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস)। নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ করতে গিয়ে ড্রেজারে বালু দিয়ে ভরাট করেছে সড়কের পাশে থাকা সরকারি খাল। তাতে বন্ধ হয়ে গেছে পানির স্বাভাবিক চলাচল। মাসের পর মাস বৃহৎ একটি খাল ভরাট হয়ে গেলেও উদ্ধারে নেই উদ্যোগ। 

অন্যদিকে, প্রত্যেকটি খালের উপর অবৈধ ভাবে স্থাপনা গড়ে ওঠায় শীতলক্ষ্যা নদীর সাথে সংযোগ হারিয়েছে খালগুলো। আর সামান্য বৃষ্টিতেই পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শত শত পরিবার।

জানা যায়, ১৯৮১ সালে কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ২০ গ্রামে প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে “নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রজেক্ট”র (এনএনডি) আওতায় এনে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) নামক প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ করা হয় কাঞ্চন থেকে রূপসী এবং কাঞ্চন থেকে ভুলতা গাউসিয়া বেড়িবাঁধ সড়ক। কৃষি আবাদের সুবিধার্থে পানি নিস্কাশন ও উত্তোলনের জন্য বেড়িবাধেঁর ভেতরে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। 

পরে মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদী থেকে গোলাকান্দাইল, কাঞ্চন পৌরসভার কালাদী থেকে গোলাকান্দাইল, হাটাব থেকে বিলের মাঝখান দিয়ে বারুইপার-টানেল-ডুলুরদিয়া-কুশাব হয়ে গোলাকান্দাইল, টেকপাড়া টানেল থেকে কানিবিল-মাউচ্চার বিল হলে বানিয়াদী খাল পর্যন্ত সরকারি অর্থায়নে খাল খনন করা হয়। পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালের উপরে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠে ছোট-বড় শতাধিক স্থাপনা। দীর্ঘ ৩ যুগে খালগুলো পুনরায় খনন না করায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দখল দূষণে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও জমি অধিগ্রহণ করেও খাল খনন করা হয়নি। ফলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি আটকে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ এলাকায়। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

 

 

কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, বছরের পর বছর ধরে খালের সাথে শীতলক্ষ্যা নদীর সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে।  প্রায়ই দেখি টুকরো টুকরো খাল উদ্ধার করতে প্রশাসনের লোকজন আসে, অভিযান করে চলে যায়। নদীর সাথে খালের যে সংযোগ সে বিষয়ে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। অথচ নদীর সাথে খালের সংযোগ না করলে জলাবদ্ধতা কখনোই নিরসন হবে না।
 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপড়া-ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের মধ্যে বেড়িবাঁধের ভেতরে কাঞ্চন, ত্রিশকাহনিয়া, কালাদী, নলপাথর, কুশাব, ডুলুরদিয়া, টেকপাড়া, বারুইপাড়, হাটাব, আমলাব, শিংলাব, পিঠাঘুড়ি, বেরোক, পানাব, সোনাব, মাসুমাবাদসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মধ্যে দুই হাজার বিঘা কৃষি জমির চাষাবাদের সুবিধার্থে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে টাটকির খাল, সুতালরির খাল, দাগিরমার খাল, মাউচ্চা ও কানি বিলের খালসহ একাধিক খাল রয়েছে। কিন্তু হাটাব বারৈপাড় এলাকায় কানি বিলের পিঠাগুড়ি অংশে খালের উপর বাগান বাড়ি নির্মাণ করায় বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল। 

শীতলক্ষ্যা নদী থেকে টাটকির খাল, সুতালরির খাল, দাগিরমার খাল, কালাদী থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত ১৮০ ফুট এশিয়ান হাইওয়ে সংলগ্ন সরকারি খাল দখল হয়ে আছে সড়ক নির্মাণাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের অবহেলায়। 

এছাড়াও, অবৈধ ভাবে সরকারি খালের উপর কালাদী, নলপাথর, কুশাবো এলাকায় গড়ে ওঠেছে একাধিক বালুর গদি, হান্ডিমার্কেট এলাকায় খালের উপরে গড়ে ওঠেছে এটলাস টয়লেট্রিস ও সাবান ফ্যাক্টরি, এনডিই রেডিমিক্স, ম্যাংসাং সার্ভিসিং সেন্টারসহ অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও অর্ধশত বসতবাড়ি। তাতে শীতলক্ষ্যা নদীর সাথে খালগুলোর সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

একদিকে পানি স্বাভাবিক চলাচল বাধাঁগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে বালুর গদির অপ্রয়াজনীয় হাজার হাজার টন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাশয় আর ভারী বর্ষণে রূপ নিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ওই সমস্ত এলাকায় ইরিগেশন প্রজেক্ট বা বেড়িবাঁধের ভেতরে এমন জলাবদ্ধতায় শুধু কৃষি আবাদই ব্যাহত হচ্ছে না মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। 

 

 

এছাড়াও, কারখানার দূষিত বর্জ্য খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়ায় পানিবাহিত রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে এলাকার মানুষের মধ্যে।

টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'এলাকার ৪/৫টি খাল বেআইনি ভাবে দখল করে খালের উপরে অর্ধশত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে গ্রামবাসীর পক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের লিখিত দরখাস্ত দিয়েও কোনো সুফল পাইনি। যারা খাল দখল করছে তারাই আবার জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে।‍'

বেলতলা এলাকার শাখাওয়াৎ হোসেন ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'সরকারি খাল ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে এনডিই রেডিমিক্স, মেট্রো ওয়ার্কশপ, ইনডেক্স পাওয়ারপ্ল্যান্ট ও এটলাস টয়লেট্রিস নামক প্রতিষ্ঠান। খালের পানি চলাচল বন্ধ করে দেদারছে ব্যবসা করছে কতিপয় বালুমহাল।'
 
খালের উপর অবৈধ ভাবে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে এনডিই রেডিমিক্স কোম্পানির রিডিং প্রোডাকশন ম্যানেজার শাখাওয়াৎ হোসেন ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমাদের ফ্যাক্টরি সরকারি খাল দখল করেনি তবে ফ্যাক্টরির বর্জ্যগুলো মাঝে মাঝে খালের উপরে পরে। সেগুলো আমাদের শ্রমিক দিয়ে নিজেরাই পরিষ্কার করে দেই।'

একই বিষয়ে জানতে চাইলে এটলাস লয়লেট্রিজ ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিজানুর রহমান ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'খাল দখলের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে মালিকরা ভালো বলতে পারবেন।'
 
 

 

অধিগ্রহণকৃত সরকারি খালের জমি অবৈধ ভাবে দখল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী রেজাউল করিম ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমি অল্প দিন হয় এখানে যোগদান করেছি। এরই মধ্যে ইরিগেশন প্রকল্পের সকল খাল উদ্ধারে প্রধান উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খালগুলো উদ্ধার করা হবে।'

তিনি বলেন, 'সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাজীপুর-মদনপুর বাইপাস সড়ক প্রশস্তকরণের সময় রাস্তার পাশের খালটি ভরাট হয়ে গেছে। তবে তাদের খালের বিকল্প খাল খনন করে দেয়ার কথা ছিল।'
 
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান সহকারী প্রকৌশলী (ব্যবস্থাপনা) এ এস এম ইলিয়াস শাহ ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'রাস্তার কাজে সরকারি খাল ভরাটের বিষয়ে জানা নেই। তবে খোজঁ নিয়ে দেখছি, এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমরা সরকারি খাল, রাস্তা ও খাস জমি উদ্ধারে কাজ করছি। ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি খাল ও রাস্তা উদ্ধার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে খাল খননের কাজ শুরু করা হবে।'

এমএ


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close