Sunday | 12 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Sunday | 12 October 2025 | Epaper
BREAKING: ট্রাইব্যুনালের ১৫ অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে      জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ২ দিন পেছালো      জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশে উত্তেজনা, ছত্রভঙ্গ করলো পুলিশ       এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত: জ্বালানি উপদেষ্টা      দু’একজন উপদেষ্টা ও প্রশাসন একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে: পরওয়ার      এবারের নির্বাচনে আইনের শাসন কাকে বলে দেখাতে চাই: সিইসি      ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়      

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কুড়িগ্রামের ৪ আসনে জামায়াতের একক, বিএনপিতে বিভ্রান্তি

Published : Saturday, 23 August, 2025 at 6:29 PM  Count : 266

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলা নিয়ে চারটি সংসদীয় আসন গঠিত। নদ-নদী বেষ্টিত ও ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলার গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠায় এ জেলায় কর্মক্ষেত্র তুলনামূলক কম হলেও কৃষিতে উদ্বৃত্ত এ জেলার রয়েছে বড় ধরনের সাফল্য। সেই সাথে রয়েছে কর্মক্ষম মানুষের বড় একটি অংশ। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা এবং বিদেশে কাজ করে জেলার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ও সদ্য ভেঙে যাওয়া সংসদ অবধি জেলার ৪টি সংসদীয় আসন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ জোটগত ও এককভাবে ধরে রাখলেও জেলার উন্নয়নে রাখতে পারেনি কোনো দৃষ্টান্ত। ফলে বিগত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এ জেলার মানুষ ভরসা রাখতে চায় বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির ওপর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আওয়ামী লীগের নেতারা গা ঢাকা দিয়ে আছেন আর জাতীয় পার্টি এক প্রকার নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় এ আসন ৪টির দাবিদার সামনের সারিতে থাকা বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি এই তিনটি দলই।

কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী)
জেলার সর্ব উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা এ আসনটিতে কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে জন প্রতিনিধি। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি তাদের কাঙ্ক্ষিত জীবনমান। জাতীয়ভাবে উন্নয়নের ছোঁয়ায় কিছুটা উন্নত হলেও তৈরি হয়নি কর্মসংস্থান, বাড়েনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। এ আসনে একটি পৌরসভায় বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। এছাড়া একটি স্থলবন্দর তৈরি হলেও পণ্য রপ্তানি ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা না থাকায় শুধুমাত্র পাথর আর কয়লা আমদানিতে প্রসারিত হয়নি বন্দরটি।

জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি। বিএনপি ১৯৯৬ সালে আর আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে রাতের ভোটখ্যাত নির্বাচনে একবার জয়ী হয়। এছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টি দখলে রাখে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ আসনে জমে উঠেছে ভোটের পরিবেশ। আসনটিতে বিএনপির কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও জামায়াত তাদের প্রার্থী ঘোষণা করায় মাঠ গোছানোর কাজে এগিয়ে রয়েছে দলটি। এনসিপির প্রার্থী মনোনীত হয়নি আর ইসলামী দলগুলোর প্রচারণায় নেই গতি। আসনটিতে বিএনপির দলীয় কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ঘরে সুফল আনতে মরিয়া জামায়াত। স্থানীয়ভাবে সুসংগঠিত না হলেও কোটা আন্দোলনের অন্যতম নেতা গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা তরুণ ভোটারদের সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি দলটির স্থানীয় নেতাদের। সব মিলিয়ে ভোটের হিসাব-নিকাশে এবার নতুন এক সমীকরণ যোগ হচ্ছে।

এ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, ড্যাব নেতা ও জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইউনুছ আলী এবং নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম রসুল রাজা পৃথক পৃথকভাবে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। তবে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা প্রার্থীরা জানান, আসনটিতে বিএনপির বড় একটি ভোট ব্যাংক থাকায় শেষ পর্যন্ত যিনি প্রার্থী হবেন জয় তারই হবে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামকে দলটির প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় তিনি মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করছেন। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা, ইসলামী আন্দোলনের হারিসুল বারী রনি, জাকের পার্টির আব্দুল হাই মাস্টার গণসংযোগ করছেন। আসনটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দলীয় তৎপরতা থাকলেও প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি।

কুড়িগ্রাম-২ (রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও কুড়িগ্রাম সদর)
আসনটি জেলা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একক আধিপত্য ছিল। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়। এরপর ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।

জেলা সদর আসনটিতে বিএনপি-জামায়াত কখনও বিজয়ী হতে না পারলেও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের কারণে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি বিজয় ছিনিয়ে নিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াছিন আলী সরকারকে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করায় দলের নেতা-কর্মীরা একাট্টা হয়ে কাজ করছেন তাকে জেতানোর জন্য। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন দলকে আসনটি উপহার দিতে। অন্যদিকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করলেও দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা চান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে এ আসনে প্রার্থী করা হোক। পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু ও হাসিবুর রহমান হাসিব উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করে তাদের প্রার্থীতার কথা জানাচ্ছেন ভোটারদের। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জাতীয় শিক্ষক ফোরাম জেলা সভাপতি মাওলানা নূর বখত মিয়াকে মনোনীত করেছে দলটি।

কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর)
উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৩ আসন। ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে ধরে রাখলেও বর্তমানে পাল্টে গেছে রাজনীতির দৃশ্যপট। এ আসনে মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা জামায়াত তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ভোটযুদ্ধে জামায়াত একক প্রার্থী দিয়ে সক্রিয় দল হিসেবে জনগণের নজরে এসেছে। তবে এ আসনে বিএনপির জনপ্রিয়তাও অনেক। দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীরা পড়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। তবে আসনটির প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার বিএনপির জয় আসবে বলে জানান মনোনয়ন দৌড়ে থাকা নেতারা। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আসনটিতে ঘাঁটি গাড়তে চায়।

জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ইসলামী আদর্শের রাজনীতি ও তৃণমুলের মানুষের দ্বারে দ্বারে নতুন আস্থার বার্তা দিচ্ছেন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে কাজ করছেন দলটির সাবেক জেলা সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাসভীর উল ইসলাম এবং বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক। দুজনই মাঠে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে কেন্দ্রে জোর লবিং চালাচ্ছেন।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও দলটির প্রার্থী অ্যাডভোকেট এসএম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. আক্কাস আলী সরকার। গণসংযোগে এ দুই প্রার্থীও নিজ নিজ আদর্শিক অবস্থানে থেকে অংশ নিচ্ছেন মাঠের লড়াইয়ে।

এনসিপির তৃণমূলে তরুণ সমাজের বড় একটি অংশ কাজ করলেও এখনও দলীয় প্রার্থী মনোনীত করেনি দলটি।

কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী)
ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসন। এ আসনে কেউ কেউ দলের একক প্রার্থী হিসেবে, আবার কেউ দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক ছাড়াই শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। ২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোট ও দোয়া চেয়ে ব্যানার-ফেস্টুনে প্রচার করে চলেছেন। বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও জামায়াত মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফলে প্রচার-প্রচারণায় বেশ স্বাচ্ছন্দে কাজ করছেন বলে জানান জামায়াত মনোনীত প্রার্থী। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনও তাদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন, চিলমারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারী সরকার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান, রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান, মহিলা দলের নির্বাহী কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মমতাজ বেগম লিপি এবং জেলা যুবদল সভাপতি রায়হান কবির।

জামায়াতে ইসলামীর রৌমারী উপজেলার সাবেক আমির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ও ইসলামী আন্দোলনের রৌমারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান।

এ আসনে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি) বিভিন্ন সময় জোটগতভাবে বিজয়ী হয়। মনোনয়ন দৌড়ে জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা নানাভাবে ভয়ভীতি ও শক্তি প্রদর্শন করে জয়লাভ করে। এ তিন উপজেলার মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে জয় পাওয়া দলগুলো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখানকার মানুষ ইসলামী আদর্শের ছায়াতলে এসেছে। তাদের জয় এখন সময়ের ব্যাপার।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ১৫টি বছর মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর আবার ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বপ্ন দেখছে জনগণ। বিএনপিকেই মানুষ বেছে নেবে।

এসআর

সম্পর্কিত   বিষয়:  কুড়িগ্রাম  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close