বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। দু’একজন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের কিছু অংশ গোপনে একটি দলকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছে। তারা যেন এক ধরনের চাপে রয়েছে।
তিনি বলেন, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের গোপন পথ ছেড়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৯টায় খুলনা জেলার পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের গণআন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যুদ্ধ। এখন আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে ইসলামের পক্ষে শক্তিকে জাতীয় সংসদে পাঠাতে হবে।
পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় গেলে তাদের প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, যেখানে সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত হবে। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।
তিনি আরও বলেন, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কুরআনের আইনকে সংসদে পাঠাতে হবে এবং কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করতে হবে। এজন্য তিনি আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক এবং খুলনা-৬ আসনে মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
সমাবেশ পরিচালনা করেন পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আলতাফ হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন: খুলনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, গাউসুল আযম হাদী, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, এডভোকেট লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক নূরুজ্জামান মল্লিক, মাওলানা শেখ কামাল হোসেন, কাজী তামজীদ আলম, এডভোকেট আব্দুল মজিদ, অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, মুফতি আহম্মদ আলী, মাওলানা বুলবুল আহম্মদ, মাওলানা আব্দুল খালেক, হাফেজ মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান, মাওলানা আব্দুস সবুর, ডা. আসাদুল হক, মিজানুর রহমান, অমরেশ চন্দ্র মন্ডল, এস এ মুকুল, তারিক মাহমুদ শিশির, খালিদ মাহমুদ রেজা, হাফেজ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
পরওয়ার আরও বলেন, এর আগে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব দেখেছি, এবার চাই সুশাসনের জন্য বিপ্লব। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এখন ঐক্য গড়ে উঠেছে—এই ঐক্য থাকলে অন্য দলগুলো জনগণের আস্থা হারাবে।
তিনি ঘোষণা দেন, নির্বাচনে জয়ী হলে জামায়াতের নেতারা কোনো সরকারি প্লট, গাড়ি, বাড়ি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবেন না। পাশাপাশি, তিনি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই রকম ঘোষণা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, দেশবাসী অনেক শাসন দেখেছে। এবার তারা কিছু নতুন দেখতে চায়। ধান লাঙল দিয়ে চাষ করে, নৌকায় করে বাড়ি তোলা হয়েছে, এবার দাড়িপাল্লায় মেপে তার হিসাব নিতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপশাসন দূর করতে কুরআনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দেশের সকল ইসলামী দলের সঙ্গে একটি বোঝাপড়া হয়েছে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া উচিত, যাতে প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন সম্ভব হয়। বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি—এবার অন্তত ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যাশা জনগণের।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অনেকে পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। কিন্তু যারা এই পদ্ধতি বোঝেন না, তাদের রাজনীতি করা উচিত নয়।
তিনি প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ সময় তিনি কয়রা-পাইকগাছার উন্নয়নের জন্য ২০ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। বলেন, জামায়াত নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দু’টি উপজেলা নিয়ে ‘সুন্দরবন জেলা’ গঠনসহ সব সমস্যার পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে ইনশাআল্লাহ।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল ভেবেছিল আগের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে আবার ক্ষমতায় আসবে। অথচ তাদের নিজ দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে ৫ আগস্টের পর যত নেতা-কর্মী খুন হয়েছে, তা ফ্যাসিবাদের আমলেও হয়নি। মানুষ বুঝে গেছে—তাদের ক্ষমতায় আসা মানে কী ধরনের শাসন হবে।
তিনি বলেন, এ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা বারবার ভোট বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। ফলে তারা এখন ভোটের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আগে ক্ষমতায় গিয়ে, পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পুরনো কৌশল এবার আর সফল হবে না। মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এসএস/আরএন