সূর্য পূজায় পূণ্যার্থীদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের পূর্ণভবা নদীর তীর। ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে দিনাজপুরে পূর্ণভবা নদীর তীরে সূর্য পূজার প্রথম দিন পালিত হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত ভোরে, অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন, পূর্ণভবা নদীর একই স্থানে পূর্বমুখী হয়ে সূর্য পূজার দ্বিতীয় ও শেষ দিন পালন করা হবে।
সূর্য পূজাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ছট পূজা। প্রতি বছর কালীপূজার পর শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে নদীর তীরে সূর্যদেবতাকে সন্তুষ্ট করতে এই পূজা উদযাপন করা হয়। দিনাজপুরের পূর্ণভবা নদীতে মনোবাসনা পূরণ, আপদ-বিপদ দূরীকরণসহ বিভিন্ন মানত পালনের আশায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়সহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। নদীর তীর পূর্ণ হয়ে ওঠে পূণ্যার্থীদের পদচারণায়, যা এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সূর্য পূজার প্রথম দিনে, সোমবার (২৭ অক্টোবর), সূর্যাস্তের আগে পূণ্যার্থীরা উপবাস অবস্থায় ফুল, প্রসাদ, বাদ্যযন্ত্র ও নানা পূজার সামগ্রী নিয়ে দিনাজপুরের পূর্ণভবা নদীর তীরে কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন সাধুরঘাটে উপস্থিত হন। সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্তে পূণ্যার্থীরা নদীতে গোসল করে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে কুলায় সাজানো প্রসাদ দিয়ে পূজা শুরু করেন। সূর্যাস্তের পর তারা বাড়িতে ফিরে যান।
পরদিন মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে পূণ্যার্থীরা আবার নদীর তীরে উপস্থিত হয়ে সূর্যোদয়ের পূর্বমুহূর্ত থেকে একই নিয়মে পূজা শুরু করেন। সূর্যোদয়ের পর সূর্যকে প্রণাম জানিয়ে নদীতে স্নান ও সরবত পান করে উপবাস ভঙ্গের মাধ্যমে পূজার সমাপ্তি ঘটে। পূজা শেষে পরস্পরকে আবির মেখে শুভেচ্ছা জানান পূণ্যার্থীরা।
সূর্য পূজা করতে আসা বিপ্লব পদ্দার গুপ্ত, রিনা পদ্দার গুপ্ত ও রাখাল চন্দ্র দাস বলেন, “আমরা সূর্যদেবতাকে সন্তুষ্ট করতেই এই পূজা করি। এই পূজাকে ছট পূজা বলা হয়। ছট পূজার মাধ্যমে সূর্যদেবতা সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের মনোবাসনা ও মানত পূর্ণ করেন—এই বিশ্বাসে আমরা প্রতি বছর পূর্ণভবা নদীর তীরে আসি। এছাড়াও জগতের সকলের শান্তি কামনাতেও এই পূজা করা হয়।”
সূর্য পূজা যদিও মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবুও পূর্ণভবা নদীর এই পূজা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। পূজাকে ঘিরে নদীর তীরে বসে বিভিন্ন খেলনা ও খাবারের দোকান, যা উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এএইচ/আরএন