গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবার (১ নভেম্বর) সকালটা ছিল অন্যরকম আবেগে ভরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চোখের জলে বিদায় জানান প্রিয় প্রধান শিক্ষক এ. কে. এম. মুজিবুর রহমানকে।
দীর্ঘ ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটান তিনি—যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে পথচলা শুরু করেছিলেন, সেই বিদ্যালয় থেকেই শেষ করলেন শিক্ষকতা অধ্যায়।
১৯৬৬ সালের ৩১ অক্টোবর গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বরাইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ. কে. এম. মুজিবুর রহমান। বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তার শিক্ষাজীবনের সূচনা। পরে দীর্ঘ শিক্ষাযাত্রা শেষে ফিরে আসেন সেই প্রিয় বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক হিসেবে।
জন্মের মাসেই শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানেন তিনি—যা যেন প্রতীক হয়ে রইল তার জীবনের এক পূর্ণতার গল্প।
শনিবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. টি. এম. কামরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি, শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাবকরা।
শেষে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয় এবং সুসজ্জিত গাড়িতে করে বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।
১৯৮৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে (সম্মান) স্নাতক এবং ১৯৯০ সালে একই বিষয়ে এম.এসসি সম্পন্ন করেন তিনি।
উচ্চশিক্ষার পর সরকারি বিভিন্ন চাকরির প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দেন। কারণ, বাবার ইচ্ছা ছিল—ছেলে যেন শিক্ষকতা দিয়েই জীবন শুরু ও শেষ করেন। বাবার সেই অনুরোধের মর্যাদা রেখে মুজিবুর রহমান সারাজীবন শিক্ষকতাকেই জীবনব্রত হিসেবে বেছে নেন।
১৯৯৫ সালের ১২ জুন পুনসহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পাঁচ বছর ছয় মাস পর বদলি হয়ে দেওতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৪ সালের ২৭ এপ্রিল নিজ গ্রাম বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখানেই টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন।
তার তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা বহু শিক্ষার্থী আজ দেশের নানা প্রান্তে দায়িত্বশীল পদে কর্মরত। কেউ শিক্ষক, কেউ প্রশাসনে, কেউবা দেশের বাইরেও শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন।
সবার মুখেই এক কথা—“স্যার শুধু শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক।”
শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেও শিক্ষার প্রতি তার ভালোবাসা ও মানবিকতা তাকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখবে।
জন্মমাসেই অবসর, এক জীবনের পূর্ণতার ইঙ্গিত-‘যে মাসে পৃথিবীতে আলো এনেছিলেন, সেই মাসেই আলো ছড়িয়ে বিদায় নিলেন বিদ্যালয় থেকে।
আরএস/এসআর