বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা শক্তি যারা ১৯৭১ সালে বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন ১৯৭১-কে ছোট করে দেখাতে চায়। তারা শুধুমাত্র ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে তুলে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, সেটিই আমাদের জন্মের ঠিকানা। এই দেশের, এই ভূখণ্ডে সেদিন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে, এবং এটা আমাদের মনে রাখতে হবে সবসময়। ১৯৭১ হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের কথা, আমাদের পরিচিতির কথা, আমাদের স্বাতন্ত্রের কথা।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটা শক্তি যারা ১৯৭১ বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন ১৯৭১-কে অবমূল্যায়ন করতে চায়। তারা শুধুমাত্র ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। একদিন নয়, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করার জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা সংগ্রাম করেছেন। আজ যদি কেউ দাবি করে যে, তারা এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সেটা মানতে রাজি নই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের পার্টির প্রধান এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় তাকে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়নি। আমাদের ইলিয়াস ভাইসহ ১ হাজার ৭০০ মানুষকে নিঃশব্দে হত্যা করা হয়েছে। ২ হাজার মানুষকে হত্যা করে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা বিভক্তি আনার পক্ষে না, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি বিভক্তি আনার চেষ্টা করছে। যারা ১৯৭১ সালকে ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য একটাই— ১৯৭১-কে অস্বীকার করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে যারা আমাদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আপনারা এই দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন। আমাদের অনেক জ্ঞানী-ব্যক্তিকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল। আমরা এগুলো ভুলিনি। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পরে, ৭ নভেম্বরের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংস্কার শুরু করেছিলেন। প্রথমে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শেখ মুজিবের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের পর, জিয়াউর রহমান আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্ট ফরম গভর্মেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফরম গভর্মেন্টে পরিবর্তন করেছিলেন। আমাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি নতুন নির্বাচন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করেছিলেন। যার অধীনে প্রায় চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তা সুন্দরভাবে সবার মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটি বাতিল করে মানুষের ভোটের অধিকার খর্ব করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনী দল, আমরা শুরু থেকেই নির্বাচনের কথা বলছি। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সভা করে বলেছিলাম, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই। কেন? কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংসদ গঠন হলে, আজকের অপশক্তিগুলোর মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ পেত না। আপনারা যেভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, জনগণকে বোকা বানিয়ে সংস্কার করতে চান, সেটা আমাদের জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যে সনদ আমরা পাস করেছি, আমাদের মনে আছে— পার্লামেন্টের সামনে বৃষ্টি হচ্ছিল। ছাতা ধরে সই করেছি। সেখানে যে বিষয়গুলো সই করা হয়েছিল, তা বলেছিল যে, সব রাজনৈতিক দল যেগুলোতে একমত, সেগুলো সই হয়ে যাবে। যে বিষয়ে একমত হবে না, সেগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। কিন্তু এখন তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর কোনো কথাই নেই। তবে, আমরা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রেস কনফারেন্স করেছি, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ করিনি, প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি ঘেরাও করিনি বা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করিনি। আমাদের কথা পরিষ্কার— আমরা যা সই করেছি, তার দায় দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব, কিন্তু যা সই করি নাই, তার দায় দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব না।
পিআর হবে কিনা, সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যেটা ঘোষণা করেছেন (প্রধান উপদেষ্টা), ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। পিআর হবে কি না, তা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি। যদিও গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তবুও আমরা রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে। আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে প্রায় হাজার কোটি টাকার উপরে খরচ হবে। নির্বাচনে দুটি ব্যালট থাকবে— একটিতে গণভোটের কথা থাকবে, আরেকটিতে সংসদ নির্বাচন হবে। এটি একটি সুন্দর প্রস্তাব, কিন্তু এখন তারা বলছেন, গণভোট আগে হতে হবে। তারপর নির্বাচন হবে। এটা আপনারাই বলছেন। আমরা নির্বাচনের পেছানোর কথা একবারও বলিনি। আমরা বারবার বলেছি, নির্বাচনটি অতি দ্রুত করতে হবে। জনগণকে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করবেন না।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
আরএন