নাটোরের সিংড়ায় এক রাতের অতি বৃষ্টিপাতে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক বাড়ি-ঘরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষকের স্বপ্নের সোনার আমন ধান সহ শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রায় ৭১৮ হেক্টর জমির ধান সহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি মানুষেরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। বছরে পর পর কয়েক দফা অতি বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা পড়েছেন দুঃচিন্তায়।
শনিবার সিংড়া পৌরসভার চাঁদপুর, মাদারীপুর, সরকারপাড়া, বাগানপাড়া, পেট্রোবাংলা, গাইনপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতের ভারী বর্ষণে প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর ও কিছু দোকান পাটে পানি ঢুকে রয়েছে। পানিবন্দি মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। অনেকেই জীবিকার তাগিদে হাটু পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। আবার অনেকেই বাড়ির দরজায় হাটু পানিতে টোনা জাল ও ওড়না দিয়ে মাছ ধরছেন। বেশ কিছু ঘরের মেঝে ও রান্না ঘরের ভেতরে হাটু পানি ঢুকে পড়ায় রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সিংড়ায় ভারী বর্ষণের ফলে সিংড়া পৌরসভা, ডাহিয়া, ইটালী, হাতিয়ান্দহ ও চামারী ইউনিয়ন সহ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭১৮ হেক্টর জমির আমন ধান, কলা, পেপে ও সবজি নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
মাদারীপুর মহল্লার প্রফেসর পাড়ার বাসিন্দা অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, তার এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষেরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই তাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
চাঁদপুর মহল্লার বাসিন্দা ও কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ সায়বর আলী আকন্দ বলেন, বর্ষণে ওই এলাকায় প্রায় অর্ধশত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। হাটু পানি মাড়িয়ে মানুষজনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ময়লা আবর্জনা ও পয়নিষ্কাশন পানিতে মিশে কষ্টসাধ্য অবস্থা বিরাজ করছে।
চামারী ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক বলেন, তার ৬ বিঘা কলা বাগান ভারী বর্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, অতি বৃষ্টিপাতের ফলে কৃষকের রোপা আমন ধান সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য মতে ৭১৫ হেক্টর জমির রোপা আমন সহ ৩ হেক্টর সরিষা ও সবজি ফসল ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা দুই হাজার ২১০ জন। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, বর্ষণের পানি নিষ্কাসনে পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
এসআই/এসআর