Monday | 27 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Monday | 27 October 2025 | Epaper
BREAKING: ব্যাটিং ব্যর্থতায় হার দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু বাংলাদেশের      জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ হস্তান্তর মঙ্গলবার      সালমান শাহ হত্যা মামলা: সামিরা-ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা      ড্যাফডিল-সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা      ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৮৩      জামালপুরে অটোরিকশা-কাভার্ড ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৪      সংস্কার নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার তথ্য সঠিক নয়      

গণঅভ্যুত্থান, ৫ আগস্ট ও হাসিনার পতন

Published : Tuesday, 29 July, 2025 at 9:14 PM  Count : 641

দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা কয়েক সপ্তাহের ছাত্র ও জনতার বিক্ষোভ, রক্তক্ষয় এবং দেশজুড়ে অশান্তির পর প্রধানমন্ত্রীপদ এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

ছাত্র-জনতা-মেহনতি মানুষের অভ্যুত্থানের মুখে ফলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এ বছর এক বছর পূর্ণ হলো। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশকের স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয় এই দিন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক এ পট পরিবর্তনের দগদগে স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বাস্তবে কার্যত একটি ‘একনায়কতান্ত্রিক’ সরকারে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে বাস্তবিক অর্থে আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুইটি হয়েছে অনেকটা একতরফা নির্বাচন। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনটি হয়েছে একেবারেই আমি-তুমি-ডামি নির্বাচন। জনগনের ভোটারধিকারের কফিনে শেষ পেরেক মরা হয়েছিল। ফ্যাসীবাদের গত ১৫ বছরে মানুষ আসলে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নেয়ার বা মতামত জানানোর কোন অধিকার পায়নি। দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ”আওয়ামী লীগ যেটা করেছে, জোরজবরদস্তি করে একটা কতৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করলো। জনগণের কোন রায় তারা নেয়নি। ফলে জনগণের সমর্থনও ছিল না তাদের পেছনে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে জবরদস্তি করে ভুয়া নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় ছিল।”

১৫ বছরে ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকারের আমলে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই নয়, বিরোধী গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিরুদ্ধ মত দমন করা হয়েছে কঠোর হাতে। বিরোধী গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, দখল নেয়া হয়েছে অথবা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশে গত বহু বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমেও শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার জের ধরে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার ও পুলিশ বাহিনী মিলে পুরো দেশকে একটা ‘মাফিয়া স্টেট’ তৈরি করেছিল। আর এসবের জন্য সবসময়েই সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী এমনকি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে।

১ আগষ্ট থেকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত দেশবাসীরমত আমাকের থাকতে হয়েছিল দম বন্ধ করা পরিস্থিতির মাঝে। নিজে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে সরকারী বাহিনী ও সরকারী দলের সমর্থকদের হুমকির মুখে ছিলাম, ঠিক তেমনই একজন পিতা হিসেবেও সার্বক্ষণ এক আতঙ্কের মাঝে প্রতিটি সময় পার করতে হয়েছে। জেষ্ঠ পুত্র গোলাম মোস্তকিন ভুইয়া মাহিন ও একমাত্র কণ্যা একমাত্র সুমাইয়া ভুইয়া মাহিমা দুইজনই ছাত্র অভ্যুত্থানের সাধারণ কর্মী হিসেবে মাঠে অবস্থান করছিল। তাদের সহকর্মী রাহুল, প্রিয়তাকে সাথে নিয়ে বন্ধুদের একটা গ্রুপ প্রতিনিয়ত রাজপথের আন্দোলনে সোচ্চার ছিল। রামপুরা থেকে বনশ্রীতে তখন চলছিল সরকারী বাহিনী ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের গুলি বর্ষণ। নির্বিচারে হামলা, ফলে আহত হচ্ছে আমার সন্তানের মত অন্যান্য সন্তানরাও। সে এক শাসরুদ্ধকর অবস্থা। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ, সংবাদ কর্মীদের সাথে কথা বলা এরই মাঝে অন্য বাবা মার মত করে নিজ সন্তানদের জন্য চিন্তা করা। তখন পরিস্থিতিটা এমই ছিল নিজের সন্তানদেরও আন্দোলনে যেতে বাধাঁ দেয়ার মত নৈতিক অবস্থান ছিল না কোন বাবা-মারই। মাহিন-মাহিমার প্রশ্ন ছিল বাবা আমার ভাই-বোন, সহযোদ্ধারা মাঠে আমরা তো ঘরে থাকতে পারি না। অন্যদিকে আমাদের আরেক রাজনৈতিক সহকর্মী মিতা রহমানও ছিলেন একই ভাবে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায়। কারণ তার একমাত্র ছেলে মির্জা রাফিউ আহমেদও ঘর থেকে বের হয়ে আন্দোলনে।

৪ আগস্ট গভীর রাতে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির সাথে। তিনি অনেকটা নিশ্চিভাবেই বললেন সরকারের পতন অসম্ভাবি। এই ফ্যাসীবাদী সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারবে না। তিনি করাবন্দি এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা-সহ বিরোধী দলের নেতাদের খোঁজ খবর নেন। ৫ আগস্ট সকালেও সরকারের পেটোয়া বাহিনী আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ ও হামলা অব্যাহত রাখে। এসময় খবর আসে আমার ছেলে ছড়রা গুলিতে আহত। খুব চিন্তিত হয়ে যখন চোখ দিয়ে অশ্রু বের হচ্ছে ঠিন তখনই খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছেন। আন্দোলনকারীদের সাথে সাধারণ মানুষের ঢেউয়ে রাজপথ যেন জনতার স্রোতে পরিনত হয়। সবার চোখে মুখে সে কি আনন্দ। আমার চোখের অশ্রু তখন আনন্দ নাকি বেদনার বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ ছেলের কল মোবালে। "বাবা আমরা বিজয়ী হয়েছি"  ফ্যাসীবাদী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছে, পালিয়ে যাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলিতে শহিদ হয়েছেন আবু সাঈদ মুগ্ধ ওয়াসিমসহ বহু শিক্ষার্থী এবং নানা পেশার ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের তান্ডবে চোখের আলো নিভে গেছে ৪০০ জনের। মারাত্মক জখম ও আহত হয়েছেন ২৩ সহস্রাধিক মানুষ। পুঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে অনেককেই। এখনো শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন হাজারো মানুষ। এত ত্যাগের বিনিময়েই বিজয় এনে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা।

ইতিহাসে লেখা হলো, ৫ আগস্ট ২০২৪, শেখ হাসিনার পতন। সাথে একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। অনেকের জন্য এটা ছিল নতুন আশা, নতুন শুরু আর পুনর্গঠনের সুযোগ। তবে দিনটি একই সাথে অন্য কিছুরও সূচনা করেছিল - বিশৃঙ্খলা।

প্রতিটি সূচনার সাথে সাথে তার নিজস্ব একটি ঝড় আসে। অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার জয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও হাসিনা ও তার পরিবার পিছিয়ে থাকতে রাজি হননি। পুরো শেখ পরিবার দেশ ছাড়লেও বারবার হয়েছেন সংবাদের শিরোনাম। দেশের বাইরে থেকেও তৈরি করেছেন বিশৃঙ্খলার ঘূর্ণিঝড়। রহস্যময় ফোন কল, উদ্ভট অভিযোগ, রাজনৈতিক নাটকীয়তা এবং ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা! কি ছিল না গত এক বছরে?



LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close