Thursday | 23 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Thursday | 23 October 2025 | Epaper
BREAKING: ১৭৯ রানের বিশাল জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের      পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: আইন উপদেষ্টা      শেখ হাসিনাকে শাস্তি না দিলে শহীদ-আহতদের প্রতি অবিচার হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল      সাইফ ও সৌম্যর রেকর্ড জুটিতে ২৯৭ রানের লক্ষ‍্য দিল বাংলাদেশ      দেশকে এগিয়ে নিতে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল      টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ      সহজেই জয় পেল অস্ট্রেলিয়া      

হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্য বাঁশশিল্প

Published : Sunday, 27 July, 2025 at 2:49 PM  Count : 338

একসময় বাঁশ কাটার শব্দে মুখর থাকত রংপুরের গঙ্গাচড়ার বড়বিল ইউনিয়নের মনিরাম গ্রাম। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিল বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প- ডালি, কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস-মুরগি টোপা, মাছ ধরার ফাঁদ, হাতপাখা থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনীয় ও নকশাদার সামগ্রী। এই শিল্পই ছিল গ্রামের অনেক পরিবারের একমাত্র জীবিকা। 

কিন্তু আধুনিকতার স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের এই ঐতিহ্য। এখন বাঁশের কাজ করা মানুষগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন।

মনিরামের প্রবীণ বাঁশশিল্পী আবদুল ওয়াহেদ (৮৫) ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমার বাবার হাত ধরে এই কাজ শিখেছি। আগে অনেক অভাব অনটন ছিল, এই কাজ করেই আমাদের ১৪ ভাই-বোনের সংসার চালাতেন বাবা। কখনোই হিমশিম খেতে হয়নি তাকে। বাবার আমল থেকে বাঁশের কাজ করছি। আগে যেমন বেচা বিক্রি হত এখন আর সে রকম হয় না।'

 

 

নগরায়ণের দৌঁড়ে পাল্লা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতেও। ফলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন জনবসতি। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি ও বনাঞ্চল। গ্রামাঞ্চলে এখন বাঁশ, বন উজাড় করা হচ্ছে। তাই একদিকে বাড়ছে বাঁশের দাম অন্যদিকে কমছে এর সহজলভ্যতা। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাঁশ শিল্পীদের কর্ম সংস্থানে। 

মনিরামের বাঁশ শিল্পী কেনজুল ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আগে বাঁশ শিল্পের সোনালী অতীত ছিল, এখন সেগুলো কেবল গল্প নয়তো স্বপ্ন। আগে বাঁশ পাওয়া যেত ৫০ থেকে ১০০ টাকাতে। এখনো বাঁশ কিনতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। একটা বাঁশ দিয়ে পাশ থেকে ছয়টি মুরগির টোপা তোলা সম্ভব। একটা টোপা আমরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করি ১০০ টাকায়। তাহলে সারা দিনের পরিশ্রম করে আমাদের লাভ তেমন থাকে না।'

বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে আসার পর শাশুড়ির কাছে কুলা বানাতে শেখেন হাসনা বেগম। আজ শশুর শাশুড়ি নেই কিন্তু ধরে আছেন সেই পেশা। ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিকেও দিয়েছেন সেই শিক্ষা। বয়োঃবৃদ্ধা নারী শিল্পী মমেনা ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'এখন সব কিছুরই দাম বেড়েছে। বাঁশ, তার সবকিছুর। এই অবস্থায় এই পেশা টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টকর। আমরা পেশা টিকিয়ে রাখতে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাভের উপরে টাকা নেই। ১০০০ টাকায় ১০০ টাকা মাসে লাভ দিতে হয়। ৫ হাজার টাকায় মাসে লাভ দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। এ ঋণ যেন সংসারের বিরাট বোঝা। কোনো মাসে টাকা দিতে দেরি হলে শুনতে হয় নানা কথা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই জীবিকা আর সহজতর হবে বলে মনে করি।"

এখন আর আগের মতো অর্ডার আসে না। আসে না হাটের আগের রাতের ব্যস্ততা। ফলে গ্রামের অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ শহরে রিকশা চালান। যারা এখনো এই শিল্প আঁকড়ে ধরে আছেন, তারাও পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। কারণ পুঁজি নেই, বাজার নেই, আর নেই কোনো সরকারি সহযোগিতা। 

 

 

বাঁশশিল্পী দুলালী ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'বাঁশ কিনে আনতেও এখন অনেক টাকা লাগে। তারপর বানিয়ে বাজারে নিয়ে গেলেও বিক্রি হয় না। ঋণ নিতে চাইলে কেউ দেয় না। হাতেই টাকা নাই, সরকার থেকেও কোনো সাহায্য পাইনি।'

স্থানীয় ইউপি সদস্য লেবু মিয়া ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'মনিরামে অনেক প্রতিভাবান বাঁশশিল্পী আছেন। কিন্তু তাদের আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং পণ্য বাজারজাত করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিলে এই ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসতে পারে।'

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'বিশেষজ্ঞদের মতে- বাঁশশিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও গ্রামীণ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক ডিজাইন, প্রশিক্ষণ ও অনলাইন বিপণন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত করলে এই শিল্প আবারও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের রংপুর উপমহাব্যবস্থাপক এহসানুল হক ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমাদের উপজেলা পর্যায়ে বিসিকের কোনো অফিস নেই। ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্পগুলোর সাথে জড়িত লোকেরা আমাদের সাথে সেভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছেন না। মনিরামের বাঁশশিল্পীদের প্রয়োজন হলে তারা বিসিকে যোগাযোগ করবে, আমরা অবশ্যই তাদের ঋণের ব্যবস্থা করবো।'

মনিরামের বাঁশশিল্প এখন শুধুই ইতিহাস হয়ে যাওয়ার পথে। একটু সহানুভূতি, একটু পৃষ্ঠপোষকতা আর আধুনিক চিন্তার ছোঁয়ায় হয়তো এই হারিয়ে যাওয়া শিল্প আবারও জীবিত হতে পারে- একটি গ্রামের আশা হয়ে।

এলওয়াই/এমএ
সম্পর্কিত   বিষয়:  রংপুর   বাঁশ  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close