Thursday | 23 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Thursday | 23 October 2025 | Epaper
BREAKING: ১৭৯ রানের বিশাল জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের      পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: আইন উপদেষ্টা      শেখ হাসিনাকে শাস্তি না দিলে শহীদ-আহতদের প্রতি অবিচার হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল      সাইফ ও সৌম্যর রেকর্ড জুটিতে ২৯৭ রানের লক্ষ‍্য দিল বাংলাদেশ      দেশকে এগিয়ে নিতে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল      টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ      সহজেই জয় পেল অস্ট্রেলিয়া      

আধুনিকতার প্রতিযোগিতায় হার মানছে রংপুরের মৃৎশিল্পীরা

Published : Saturday, 26 July, 2025 at 11:53 AM  Count : 317

রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে রংপুর সদরের মমিনপুর এলাকার কুমোরপল্লী একসময় ছিল মৃৎশিল্পের এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। এখানকার কুমোরেরা বংশপরম্পরায় মাটি দিয়ে গড়ে তুলতেন সৌন্দর্য ও ব্যবহারিকতার অপূর্ব সংমিশ্রণ। তবে কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই প্রাচীন শিল্প। তবুও এখনও কিছু পরিবার টিকে আছেন, যারা জীবিকার পাশাপাশি ঐতিহ্য ধরে রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

মমিনপুরের কুমোরপাড়ায় কথা হয় প্রবীণ মৃৎশিল্পী রমানাথ কুন্ডুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার দাদার আমল থেকে আমরা মাটির জিনিস বানিয়ে আসছি। আগে গৃহস্থালি সামগ্রী যেমন হাড়ি, কলসি, বাটনা, টব, রান্নার পাতিল, দুধ রাখার হাঁড়ির খুব চাহিদা ছিল। এখন প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের ভিড়ে এগুলোর কদর বলতে গেলে নেই।”

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাটির তৈজসপত্র। টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী এবং আধুনিক রুচির সাথে মানিয়ে নেওয়া অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের বাসনপত্র এখন দখল করে নিয়েছে মাটির জিনিসের জায়গা। ফলে আগের মতো আর বেচাবিক্রি নেই কুমোরদের। নারী মৃৎশিল্পী তাপসী রানী বলেন, “আগে মানুষ পিঠা তৈরির জন্য মাটির খোলা, হাঁড়ি কিনতো। কিন্তু এখন তারা স্টিলের হাঁড়ি, লোহার কড়াই কিনছে। মানুষের চাহিদা কমে গেলে আমাদের বিক্রিও কমে যায়।”

একদিকে মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমছে, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে বাসন তৈরির মাটি ও জ্বালানির খরচ। ফলে এখানকার প্রায় ৩৮০টি কুমোর পরিবার পড়েছে চরম সংকটে। অনেকেই পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন দূরের শহরে। দুই সন্তানের জননী মিনতি দাসের স্বামী এখন ঢাকায় রিকশা চালান। বাড়ির উঠোনে অন্যদের মতো তিনিও মাটির বাসন তৈরি করেন। তিনি বলেন, “আগে মাটি কিনতাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এখন সেই মাটির দাম ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আগে একেক মৌসুমে দুই-তিন লাখ টাকার মাটির টব বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের টবের কারণে বিক্রি কমে এসেছে। সিজনে এখন এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয় না। এভাবে সংসার চালানো যায় না, তাই আমার স্বামী এখন ঢাকায় রিকশা চালান।”

ঈদ, পূজা কিংবা বাংলা নববর্ষের সময় কিছুটা বেচাবিক্রি বাড়ে, তবে তা জীবিকা নির্বাহের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাবে এই শিল্প ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। কুমোরদের মতে, সরকারিভাবে সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে।

এখানকার কুমোর নিপন দাস বলেন, “আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নেই, কিন্তু কখনও সরকারের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাইনি। কোনো সরকারি কর্মকর্তা আমাদের খবর নেননি। আমাদের জিজ্ঞেস করেননি—এই পেশার জন্য আমাদের কী দরকার? এনজিও ঘরে এসে লোন দেয়, কিন্তু ব্যাংক জমিজমার কাগজ ছাড়া লোন দেয় না। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। যদি এনজিওর লোন পরিশোধ করতে পারি, তবে ব্যাংকের লোনও পারব। এই মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে ঋণদানে যে অদৃশ্য বাধা রয়েছে, তা আগে দূর করতে হবে। তাহলেই কোনো পেশা বাংলাদেশ থেকে হারাবে না। এই পেশা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। এই পেশা টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।”

স্থানীয় সমাজকর্মী শামীমা আক্তার বলেন, “মৃৎশিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। মমিনপুরের এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে আমাদেরই।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের রংপুর উপমহাব্যবস্থাপক এহসানুল হক বলেন, “বিসিক থেকে গত বছর কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তবে এ বছর আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারব বলে আশা করছি। যদি মমিনপুরের কুমোররা প্রশিক্ষণ ও ঋণের প্রয়োজন অনুভব করেন, তাহলে তারা সংগঠিতভাবে আমাদের কাছে এলে আমরা প্রয়োজনীয় নিয়ম অনুসরণ করে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারব।”

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। তবে মমিনপুরের মাটির ঘ্রাণে এখনও লুকিয়ে আছে বাংলার প্রাচীন শিল্পের প্রাণস্পন্দন। দরকার শুধু সহানুভূতি, স্বীকৃতি এবং আধুনিক পৃষ্ঠপোষকতা—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

এলওয়াই/আরএন
সম্পর্কিত   বিষয়:  রংপুর  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close