Sunday | 12 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Sunday | 12 October 2025 | Epaper
BREAKING: ট্রাইব্যুনালের ১৫ অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে      জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ২ দিন পেছালো      জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশে উত্তেজনা, ছত্রভঙ্গ করলো পুলিশ       এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত: জ্বালানি উপদেষ্টা      দু’একজন উপদেষ্টা ও প্রশাসন একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে: পরওয়ার      এবারের নির্বাচনে আইনের শাসন কাকে বলে দেখাতে চাই: সিইসি      ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়      

সবজিতে বিষ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ

Published : Tuesday, 15 July, 2025 at 5:35 PM  Count : 132

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটহাকিমপুর উপজেলায় শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাসায়নিক দ্রব্য ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এসব এলাকায় আবাদি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কীটনাশক বিক্রেতা ও কৃষকদের বরাতে জানা গেছে, বছরে প্রায় কোটি টাকারও বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

সবজি বাগানগুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক প্রয়োগ করা হয়। উপজেলার ভর্ণাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. তকাব্বর হোসেন বলেন, “ধান চাষে প্রতি বিঘায় গড়ে ২০০ গ্রাম তরল কীটনাশক ব্যবহার করি। আর সবজি চাষে প্রতি দুই-তিন দিন অন্তর স্প্রে করতে হয়। এতে এক মৌসুমে প্রতি বিঘায় গড়ে ২ থেকে ৩ কেজি কীটনাশক লাগে।” তিনি আরও জানান, এলাকার প্রায় সব কৃষকই এ হারে কীটনাশক ব্যবহার করেন।

চাষি মাহাবুর হোসেন বাবু বলেন, “অতিরিক্ত বৃষ্টি, কুয়াশা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে সার, বীজ ও কীটনাশক কোম্পানির লোকজন এসে নানা পরামর্শ দেন। আমরা অনেক সময় তাদের পরামর্শ অনুযায়ী অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করি, ফলে আরও বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।”

মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশের পাশাপাশি কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও তাদের সচেতন করার জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঝে-মধ্যে কিছু পরামর্শ দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

অন্যদিকে, এসব কীটনাশকের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও উপকারী পোকামাকড় বিলুপ্ত হচ্ছে। রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি ইত্যাদি কীটনাশক সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত। অপেক্ষামাণকাল না মেনে কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগের এক-দুই দিনের মধ্যেই সবজি বাজারে বিক্রি করে দেন, ফলে ভোক্তারা বিষাক্ত শাকসবজি গ্রহণ করছেন।

অফ-সিজন বা অসময়ের সবজির বাজারে চাহিদা বেশি। টমেটো এখন বছরজুড়ে উৎপাদিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কেমিক্যাল স্প্রে (ফোর-সিপিএ) দিয়ে টমেটোর ফুলে পুরুষ ও স্ত্রী রেণুর পরিণতি ঘটানো হচ্ছে। এতে চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ ধান, ভুট্টা এবং বিভিন্ন শাকসবজি উৎপন্ন হয়। দেশের মোট সবজি উৎপাদনের অন্তত ১০ শতাংশ আসে এখান থেকেই। এখানকার সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

উপজেলার কীটনাশক ডিলারদের মতে, প্রতি ডিলার বছরে গড়ে ২৫–৩০ লাখ টাকার কীটনাশক বিক্রি করেন। কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, “অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষ প্রতিদিন খাদ্যের সঙ্গে বিষ খাচ্ছেন। এ কারণে বিভিন্ন জটিল রোগের পাশাপাশি জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।”

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, পাতাভোজী, কান্ডভোজী ও শেকড়ভোজী কীটের জন্য ভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োজন। বিশেষ করে রক্তে দ্রুত মিশে যাওয়ার মতো কীটনাশকগুলো মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। বিষাক্ত এসব সবজি খেয়ে শুধু মানুষ নয়, প্রাণিকুল, জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ভারসাম্যও বিনষ্ট হচ্ছে।

ফল ও সবজি পাকাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য রঙ উজ্জ্বল করলেও বাড়িয়ে তোলে বিষক্রিয়া। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কয়েকজন ব্লক সুপারভাইজার জানান, “আমরা কৃষকদের মাঝে কীটনাশকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে থাকি। এতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বটে, তবে এখনও অনেক দূর যেতে হবে।”

বর্তমানে জনপ্রিয় সবজিগুলোই হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যঝুঁকির উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা ধনিয়া, বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ, কুমড়া ইত্যাদিতে ক্যাডমিয়াম, লিড ও ক্রোমিয়ামের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক উপরে রয়েছে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফায়ার-অর্গানোফসফরাস, পায়রেথ্রয়েড, কার্বামেট ও অর্গানো-ক্লোরিন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ৭৩% বেগুন, ৬২% শসা ও ৪১% টমেটোতে নিষিদ্ধ মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

সরকারি সংস্থা ও স্থানীয় বাজারে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম না থাকায় কীটনাশক ও সার ব্যবহারে লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, বাজারে নজরদারি এবং ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এখনই সময় সচেতন হওয়ার এবং কৃষিতে টেকসই ও নিরাপদ পদ্ধতির চর্চা শুরু করার।

জিএম/আরএন
সম্পর্কিত   বিষয়:  দিনাজপুর   ঘোড়াঘাট   হাকিমপুর  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close