সৌদি আরবে গিয়ে সচ্ছলতার স্বপ্ন ছিল তৌহিদ ইসলামের। কথা ছিল ভালো একটি কোম্পানিতে চাকরি হবে। খরচ বাদে মাসে ৭০ হাজার টাকা আয় হবে। বাস্তবে সে স্বপ্ন রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। কাজ তো জোটেনি, উল্টো ১১ দিন কাটাতে হয়েছে জেলের ভেতর। এখন নিঃস্ব হয়ে ফিরেছেন নিজের গ্রাম পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চরতিস্তা পাড়ায়।
"৭০ পয়সাও বেতন পাইনি, উল্টো জেল খাটছি ১১ দিন,"- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন সৌদি ফেরত তৌহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, 'স্থানীয় দালাল জাকির ও সফিকুলের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল আমাকে।'
তৌহিদের সাথে একই সময়ে সৌদি যান তার মামা ফরহাদ রেজা এবং খালু ফরহাদ হোসেন। তারা এখনো সৌদিতে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার শুরু ২০২৩ সালের এপ্রিলে। একই এলাকার দালাল জাকির হোসেন ও সফিকুল ইসলামের প্রলোভনে পড়ে বিদেশ যাত্রায় রাজি হন তৌহিদরা। ৭০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ভিটেমাটি বিক্রি করে ওই দুই দালালের হাতে তুলে দেন ১৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু সৌদি পৌঁছে বুঝতে পারেন, তাদের কোনো চাকরির ভিসা ছিল না।
তৌহিদ বলেন, সৌদি আরবে পৌঁছালে মনির নামে এক ব্যক্তির কাছে আমাদের পাঠানো হয়। পরে মনির নিয়ে যায় শামীম নামে আরেকজনের কাছে। সেখানে নিয়ে যাবার পর প্রায় ছয় মাস আমাদের কোনো কাজ দেয়া হয়নি। সে সময় কোথাও বেরোতে দেওয়া হয়নি। ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া সারা দিনে মাত্র এক বেলা খাবার দেওয়া হতো।'
তিনি বলেন, 'পর একটি রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ দেয়া হয় আমাকে ও খালুকে। কিন্তু আট মাস কাজ করিয়ে নেবার পর কোনো বেতন দেয়া হয়নি। এমনকি বেতন চাইলে অবৈধ হিসেবে সৌদি পুলিশে খবর দেয় রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। পুলিশ আসার আগেই খালু পালিয়ে গেলেও আমি পুলিশের হাতে ধরা পড়ি।'
পরে জানা যায়, তাদের কোনো বৈধ কর্ম ভিসা ছিল না। তাদের পাঠানো হয়েছিল ফ্রী ভিসায়। তৌহিদের মামা ফরহাদ রেজাকে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ দেয়নি তারা।
সৌদি থেকে মুঠোফোনে তৌহিদ ইসলামের মামা ফরহাদ রেজার সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, 'আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা সৌদি এসে ফেঁসে গেছি। সারাক্ষণ পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকি। পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে কখনো কারো বাড়িতে কাজ করে নিজের খাবার জোগাড় করি। টাকার অভাবে দেশে ফিরতে পারছি না।'
এদিকে, ১১ দিন জেল খেটে, মুক্তি পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় গত ১১ সেপ্টেম্বর সৌদি এম্বাসির মাধ্যমে দেশে ফেরেন তৌহিদ। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দালালের কাছে টাকা ফেরতের এবং সৌদিতে আটক আত্মীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
কিন্তু দালাল চক্র তা আমলে না নেওয়ায়, তৌহিদের মা দলেনা বেগম গত ৩০ মে পঞ্চগড় আদালতে জাকির হোসেন ও সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। বর্তমানে জাকির ও সফিকুল জেলে আছেন।
এইচসি/এমএ