পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল। আগত পর্যটকদের জন্য পাঁচতারকা হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই একাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ শতভাগ বুকড হয়ে গেছে। তবে কিছু হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় থাকবে।
ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের সাদা পাথর, সাজেকের কিছু স্পট বন্ধ এবং সেন্টমার্টিনসহ কয়েকটি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক শ্রীমঙ্গলে ভিড় জমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চলমান বৈরী আবহাওয়াও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাদা পাথর বন্ধ থাকায় শ্রীমঙ্গলের কিছু রিসোর্টের বুকিং বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলার শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠা অসংখ্য রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রতিদিন সহস্রাধিক পর্যটক রাত্রিযাপন করেন। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলের ১৫ থেকে ২০টি দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলাটিতে পাঁচতারকা মানের রিসোর্টসহ শতাধিক পর্যটন অবকাঠামো রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন নামি-দামি চাইনিজ ও থাই খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো আলোর সাজে সেজেছে। খাবারের মেন্যুতে আনা হয়েছে নতুনত্ব—বাংলা, চাইনিজ, থাই খাবারের পাশাপাশি রাখা হয়েছে আদিবাসী খাবারও। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টগুলো নতুনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দেওয়া যায়।
মৌলভীবাজার জেলার হাওড়, পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা চা-বাগান, জীববৈচিত্র্য ও নান্দনিক প্রকৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ে কয়েকগুণ।
শ্রীমঙ্গলের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে চা-বাগান, হাইল হাওড়, বাইক্কা বিল, চা-কন্যার ভাস্কর্য, সাত রঙের চা, বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাবার বাগান, হজম টিলা, সীতেশ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবা কেন্দ্র, খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী তাঁতশিল্প, গারোপল্লী, ভাড়াউড়া লেক ও শংকর টিলা। ঈদের ছুটিতে এসব দর্শনীয় স্থানে দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ধলই চা বাগান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ও মাধবপুর লেকও রয়েছে পছন্দের তালিকায়।
বালিশিরা রিসোর্টের পরিচালক (পরিচালনা ও প্রশাসন) জাহানারা আক্তার ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি আগের চেয়ে অনেক বেশি চমকপ্রদ। নতুন সাজে রিসোর্ট সাজানো হয়েছে। ৫ তারিখ থেকে রিসোর্টে ঈদের সাজে নতুন রূপ পাবে। ঈদের দিনগুলো ঘিরে খাবারেও এনেছি নতুনত্ব—ফল, মিষ্টান্ন তো থাকছেই, সঙ্গে থাকবে একদম নতুন, ফ্রেশ মেন্যু।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আবহাওয়া ও অন্যান্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, তবে এবার রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হবে বলে আমরা আশা করছি। ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমাদের শতভাগ বুকিং রয়েছে, বাকি দিনগুলোতেও ৮০ ভাগের বেশি বুকিং নিশ্চিত হয়েছে। যেহেতু দেশের অন্যান্য স্থানের অনেক পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, তাই শ্রীমঙ্গলে বাড়তি চাপ পড়বে।”
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, “ঈদের ছুটিতে ৯ তারিখ থেকে বুকিং শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বুকিং ১০, ১১ ও ১২ তারিখের জন্য। এই তিন দিন পুরোপুরি হাউসফুল থাকে। শ্রীমঙ্গলে মূলত দুই ধরনের পর্যটক আসে—একদল শুধু ঘুরতে আসে, তারা থাকে না; অন্যদিকে যারা পরিকল্পনা নিয়ে আসে, তারাই রাত্রিযাপন করে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের ঈদে প্রায় অর্ধ লক্ষ (৫০ হাজার) পর্যটকের সমাগম ঘটবে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়েন। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে চলমান থাকবে।”
আরএ/আরএন