ভারতীয় গরু না থাকায় খুশি দেশি খামারিরা। জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে হাটবাজার। দেশি গরু, ছাগলসহ সব ধরনের পশু উঠেছে এসব হাটে। ভারতীয় গরুর অনুপস্থিতিতে খামারিরা যেমন স্বস্তিতে রয়েছেন, তেমনি ভালো দামও পাচ্ছেন বিক্রেতারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, হাটগুলোতে ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়।
গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম কিছুটা কম। তারপরও বিক্রেতারা পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্য। মৌলভীবাজার জেলায় পশু কেনাবেচার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি হাট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— আদমপুর বাজার, ব্রাহ্মণবাজার, শ্রীমঙ্গল দীঘিরপাড়, সাতগাঁও, মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম মাঠ ও শেরপুর।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন কোরবানির হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের গরু কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই গরু-মহিষ নিয়ে আসছেন হাটে। কেনাবেচা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
সাধারণত আদমপুর বাজার সপ্তাহে দুই দিন—শুক্রবার ও সোমবার বসে। তবে ঈদ উপলক্ষে সেখানে প্রতিদিনই বেচাকেনা চলছে। এই হাটে মাঝারি আকৃতির গরুর সংখ্যাই বেশি, যা ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এসব গরুর দাম এক লাখ থেকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের চেয়ে একটু বড় গরুর দাম দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা।
ছোট গরুর দাম ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে। তবে এবার নামকরা বড় গরু তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে হাটে। সর্বোচ্চ দাম পাঁচ লাখ টাকার বেশি নয়।
মহিষের দামও কিছুটা কম। সিটিহাটে মাঝারি আকৃতির মহিষ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে।
হাটে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। শিবপুর থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি কয়েকটি গরু এনেছিলাম, সব বিক্রি হয়ে গেছে। ভালো দাম পেয়েছি, লোকসান হয়নি। ক্রেতারাও খুশি।”
কমলগঞ্জ উপজেলার গরু ব্যবসায়ী বাচনা মিয়া বলেন, “এবার ভারত থেকে গরু-মহিষ আসেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিবি’র তৎপরতায় ভারতীয় পশু হাটে ঢুকতে পারেনি। তবে গত বছরের তুলনায় এবারও ক্রেতা কিছুটা কম। আবার দামও তুলনামূলক কম।”
জামাল নামে আরও এক ব্যবসায়ী বলেন, “এবার দেশীয় জাতের পর্যাপ্ত গরু-মহিষ রয়েছে কোরবানির জন্য। খামারিরা অনেক আগে থেকেই এসব পশু লালন-পালন করেছেন। কিন্তু যদি দাম না ওঠে, তাহলে তারা লোকসানে পড়বেন।”
আদমপুর বাজারে গরু কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক ও আসহাবুজ্জামান শাওন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম। তাই আমরা আগেভাগেই গরু কিনে নিলাম। সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।”
গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাজার হাটে গরু বিক্রি করতে যাওয়া খামারি আরিফ মিয়া বলেন, “আমার খামারে ২৫টি মাঝারি আকারের গরু রয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও আদমপুর হাটে সাতটি গরু তুলেছি। কিন্তু যেভাবে দাম হাঁকছি, তাতে লাভ হবে না। অনেক আশা নিয়ে গরু পালন করেছি, যদি লোকসান হয়, তাহলে খামার চালানো কঠিন হয়ে যাবে।”
আদমপুর বাজার ইজারাদার জাহাঙ্গীর মুন্না রানা বলেন, “হাটে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক দল। জাল টাকা শনাক্তে রয়েছে মেশিন। ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই হাট পরিচালনা করা হচ্ছে।”
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান বলেন, “কমলগঞ্জের কোরবানির হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছে ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। এই টিমগুলো পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। কোনো পশু অসুস্থ হলে তা ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পশু ফেরত পাঠাতে হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এবার কোনো ভারতীয় গরু মৌলভীবাজারের হাটে প্রবেশ করেনি। পুলিশ ও বিজিবির সক্রিয় তৎপরতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সব হাটেই দেশি গরু পাওয়া যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি গবাদিপশু, যা জেলার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের দাবি— ভারতীয় গরু না এলে দেশি খামারিরা লাভবান হবেন।
এসএস/আরএন