শিক্ষা-অধিকার-সমতা-এই তিনটি মৌলিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে সহকারী অধ্যাপক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির দাবিতে “নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক” কর্মসূচি পালন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা।
রোববার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে কারমাইকেল কলেজ, রংপুর ইউনিটের ব্যানারে কলেজের শহিদ মিনার চত্বরে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের বহু যোগ্য প্রভাষক। অথচ একই ব্যাচের বা কম ব্যাচের অনেকে ইতোমধ্যেই পদোন্নতি পেলেও তারা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে তাদের পেশাগত মর্যাদা ও মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
বক্তারা বলেন, “আমরা অর্থ চাই না, চাই সম্মান। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না পাওয়াটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও হতাশাজনক। আমরা চাই আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা দ্রুত প্রদান করা হোক। সহকারী অধ্যাপক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জিও অবিলম্বে জারি করতে হবে।”
প্রভাষক আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের ব্যাচের তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষক বহু বছর আগেই পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া আমাদের মতো অনেককে তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। এরকম বৈষম্য একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। আমরা চাই তাৎক্ষণিকভাবে জিও জারির মাধ্যমে এই জটিলতা দূর করা হোক।”
প্রভাষক বিধান চন্দ্র রাও বলেন, একজন শিক্ষক যখন সম্মান হারান, তখন শিক্ষার্থীরাও হারায় তার প্রতি আস্থা। আমরা রাজনীতি করি না, আমরা শিক্ষকতা করি—আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে বাধ্য হয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে।”
প্রভাষক আরাফাত বলেন, “আট থেকে দশ বছর ধরে একই পদের ভার নিয়েই কাজ করে যেতে হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনে দায়িত্ব বাড়ছে, চাপ বাড়ছে—কিন্তু সম্মান ও কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি একই জায়গায় থেমে আছে। এটি মেনে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়।”
প্রভাষক আল আমিন (বিসিএস–৩৬) জানান, এটি শুধুই ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়; এটি সারাদেশের হাজারো প্রভাষকের দাবি। আমরা চাই শিক্ষাক্ষেত্রে সুষ্ঠু ক্যাডার নীতি কার্যকর হোক, যার ফলে যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে।
প্রভাষক আহসানুল বলেন, ‘‘শাসনিক জটিলতা ও অদক্ষতা আমাদের ভবিষ্যৎ আটকে রেখেছে। আমরা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেই, গবেষণা করি, প্রশাসনিক কাজও করি-তবুও কেন পদোন্নতি আটকে থাকবে? সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েছি।”
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক মো. জলিলুর রহমান। তিনি বলেন,
“এই আন্দোলন কোনো দলের বা গোষ্ঠীর নয়। যাদের যোগ্যতা আছে, যারা নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির তালিকায় থাকার কথা, তাদের সুযোগ আটকে রাখা হচ্ছে। এটি অন্যায়েরই নামান্তর। আমরা চাই দ্রুত সমাধান।”
রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক মাহমুদা আলী বলেন, নারী শিক্ষক হিসেবে আমরা আরও বেশি বঞ্চনার শিকার। সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না পাওয়ায় আমাদের পেশাগত উন্নয়ন, গবেষণা সুযোগ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব সবকিছুতেই পিছিয়ে পড়ছি। তাই আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
কর্মসূচিতে উপস্থিত প্রভাষকরা বলেন, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জিও প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত “নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক”কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজন হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এলওয়াই/এসআর