পটুয়াখালীর বাউফলে ভূমি জরিপ কার্যক্রমে ঘুষ বাণিজ্যর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা মৌজায় বর্তমানে দিয়ারা সেলেটমেন্ট অপারেশন কর্মসূচীর আওতায় ‘বাংলাদেশ সার্ভে’ বিএস জরিপ চলছে। ওই মৌজায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কেস রয়েছে। ইতিমধ্যে কেসগুলোর মাঠ জরিপ ও খসড়া খতিয়ান প্রকাশ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ৩০ ধারার নিস্পত্তির কার্যক্রম চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, মাঠ জরিপের সময় জমির মালিকের নাম ও নকশা পরিবর্তন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কতিপয় দালালের মাধ্যমে জমির মালিকদের জিম্মি করে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা ওই টাকা হাতিয়ে নেন। পরে প্রতিটি কেসে ১০হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে খসড়া খতিয়ান পেতে হয়েছে। এখন আবার ৩০ ধারা নিস্পত্তি করতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিচ্ছেন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা। টাকা লেনদের বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করলে জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়া, নকশা বা খতিয়ানে ভুল এবং নানান আপত্তি দেখিয়ে কেস ঝুলিয়ে রাখার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শৌলা গ্রামের মাইনুদ্দিন ও চান মিয়াসহ একাধিক দালালের মাধ্যমে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ও আবদুস সালাম ৩০ ধারা নিস্পত্তির নামে ঘুষের টাকা আদায় করছেন। বাউফল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একটি পুরানো কক্ষে বসে ৩০ ধারা নিস্পত্তি করা হচ্ছে। অবশ্য ৩০ ধারা নিস্পত্তির নামে ঘুষ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ও আবদুস সালাম।
সম্প্রতি কেসমত আরা নামের এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেওয়ার সময় রাব্বি নামের এক দালালকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেন কয়েক সাংবাদিক। পরে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ওই দালাল পালিয়ে যায়। কেসমত বলেন, জরিপের কাজ করতে এসে আমাদেরকে দালালদের মাধ্যমে টাকা দিতে বাধ্য হতে হয়।
বরিশাল থেকে আসা এক ভুক্তভোগী বলেন, জরিপের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কয়েক দফায় প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকে স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ঘুষের টাকা দিয়েছে। শৌলা গ্রামের ৪/৫ জন দালালের মাধ্যমে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা ঘুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাউফলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ মিলু বলেন, কিছুদিন আগে আমার কাছে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে আসার পর বিষয়টি বরিশালের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করি। পরে একজন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন যারা দায়িত্বে আছেন তাদের বিষয়টিও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে। জরিপের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানী বা তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ নেই।
এএস/এসআর