৫৩ বছর ধরে যারা দেশের নীতি ও আদর্শের কথা বলে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তাদের শাসনামলে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। তাদের শাসনে আমরা পেয়েছি—রাস্তায় নামলে গুম, ঘরে থাকলে খুন; পেয়েছি আয়না ঘরের মতো অসভ্য যুগের ইতিহাস, পিলখানা ট্রাজেডির মতো ঘটনা। প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর, চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নরসিংদীর রায়পুরা পৌরমাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে। হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। প্রায় পাঁচশত মানুষ জীবনে আর কোনোদিন আলো দেখতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হলো—যারা ৫৩ বছর দেশ চালিয়েছে, তারা আবার ক্ষমতায় এসে কি আমাদের মধু খাওয়াবে? এটা ভাবাও ভুল। আপনারা বিভিন্ন নীতি ও আদর্শে দেশ পরিচালনার নমুনা দেখেছেন, কিন্তু ইসলামী নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত রাষ্ট্র কখনো দেখেননি।
রেজাউল করীম আরও বলেন, যখন কোনো মা আফসোস করেছে তার সন্তানের মুখ থেকে ডাক শোনার জন্য, তখন ইসলামী আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসীরা নেমেছে সংখ্যালঘুদের জান-মাল ও উপাসনালয় রক্ষার জন্য। আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম মানুষের কষ্ট লাঘবে, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনে। অথচ এক শ্রেণি রাস্তায় নেমেছে চাঁদাবাজির জন্য, স্টেশন ও ঘাট দখলের জন্য। তারা নিজেদের মধ্যেই ক্ষমতার ভাগাভাগি করে নিজেদের লোকদের হত্যা করেছে। তাদের কাছে কেন্দ্রীয় নেতারাও নিরাপদ নন, ব্যবসায়ীরাও নিরাপদ নন। সোহাগ নামের একজনকে পাথর ছুড়ে রাস্তায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ রকম ইতিহাস আর লিখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি—এরা কেউ আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু যারা ক্ষমতার লোভে দেশকে পাঁচবার চোরের তালিকায় শীর্ষে নিয়েছে, যারা টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, সেই চাঁদাবাজ, খুনি ও পাচারকারীদের আর বাংলার মানুষ সংসদে দেখতে চায় না।
চরমোনাই পীর জানান, ১৯৮৭ সালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত দলের কোনো সদস্য সংসদে যায়নি। কারণ, আমরা কখনোই এই দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও খুনিদের সহযোগী হইনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর রায়পুরা উত্তর শাখার সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মতিন শিপন মোল্লা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রায়পুরা পৌরসভা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা সাজেদুল্লাহ সায়েম।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের নির্বাহী পরিচালক ও নরসিংদী-৫ আসনের এমপি প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মো. বদরুজ্জামান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি শাহ ইফতেখার তারিক, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আতীকুর রহমান মুজাহিদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শফিকুল ইসলাম সরকার, মাওলানা আইয়ুব বিন মেহেদী উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
টিএস/আরএন