সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থাপিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-৩ চত্বরে শিক্ষার্থীরা প্রথমে প্রতীকী গণ অনশন শুরু করেন। এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
রোববার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন অব্যাহত ছিল। এ পর্যন্ত ২০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান, ওমর ফারুক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান, সাদমান, আবু সাঈদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মুইজ, মাইশা, নাফিদ, আজিজ, মিলন, ইসারুল, আলামিন, বাংলা বিভাগের শাকিল ও রিপন।
রোববার অনশনরত বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেরাজ বলেন, একনেক সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।
তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যদি কোনো শিক্ষার্থীর কোনো রকম ক্ষতি হয়, তার সম্পূর্ণ দায়ভার বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে। আমরা দেখতে চাই, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাদেরকে সরকারে বসিয়েছে, তাদের কাছে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যটা কতটুকু। আমাদের কথা একটাই—রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপি অনুমোদন ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ৫ জন শিক্ষার্থীকে পিপিডি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের দাবিতে ১৭ আগস্ট রোববার দুপুরে উপজেলা বিএনপি স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম এ মুহিত। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব ভূমিতেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার ১শ একর সরকারি খাস সম্পত্তি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শাহজাদপুর পৌর এলাকার দুটি বেসরকারি কলেজ ও দুটি ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকলেও আজ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের সরকারি কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উপরন্তু নির্ধারিত স্থানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে চলনবিলের ক্ষতি হবে এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, শাহজাদপুর চরলবিলের অংশ নয়। এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারে লিপ্ত রয়েছে। অথচ গত ৮ বছরে পরিবেশ নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে উপজেলা বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন হিরু, সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ, সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার মিয়া, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক নওশাদ ও সাধারণ সম্পাদক আয়ুব আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে এ পর্যন্ত ৭ বার ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ১শ একর ভূমি ব্যবহারের অনাপত্তিপত্র ডিপিপির সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছে। এত কিছুর পরও দীর্ঘ ৮ বছর পর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে চলনবিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা শুরু করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, যে স্থানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখান থেকে চলনবিলের দুরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। উপরন্তু শাহজাদপুর উপজেলা চলনবিলের অংশ নয়। তিনি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এসবি/আরএন