Saturday | 25 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Saturday | 25 October 2025 | Epaper
BREAKING: নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে: রিজওয়ানা হাসান      দেশে মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার, ঢাকায় ৫১৬৩ ডলার      ‘মিথ্যা মামলায় নিজামী, মীর কাসেম ও সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে’      ইলিশ শিকার: ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ, সমুদ্রে যাচ্ছেন ৫০ হাজার জেলে      বিমানবন্দরে আগুনের ঘটনা তদন্তে আসছে ৪ দেশের বিশেষজ্ঞ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এনসিপি      শান্তি ও সহযোগিতার বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে: ড. ইউনূস      

ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহককে হাতুড়ি পেটা, তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

Published : Friday, 25 July, 2025 at 4:36 PM  Count : 207

ইসলামী ব্যাংকের খুলনার ফুলতলা শাখার স্টোর কক্ষে একজন গ্রাহকের চোখ ও মুখ বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং প্লাস দিয়ে নখ তোলার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর নাম সাইফুল্লাহ হাজেরী (৩৫)। তিনি পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক এবং বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই ঘটনায় ফুলতলা থানা পুলিশ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—আশিক, মিজান এবং মামুন। তারা ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখার কর্মকর্তা। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জেল্লাল হোসেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাইফুল্লাহ হাজেরী বেডে রক্তমাখা সাদা পায়জামা ও গেঞ্জি পরে কাতরাচ্ছেন। তার দুই পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর দাগ রয়েছে, যা কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন স্বজনরা। হাতের আঙুলের নখ তুলতে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

ভুক্তভোগী ফুলতলা উপজেলার বেলেপুকুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে ব্যাংকের স্টোর রুমে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর বিভিন্ন সাদা কাগজ, ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ব্যাংকের মনগড়া লেখা একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ইতোমধ্যে ব্যাংকের খুলনা জোনাল অফিসের কর্মকর্তা এবং ফুলতলা শাখার ব্যবস্থাপক হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

অভিযোগে আরও জানা যায়, খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ, যার মালিক এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী। তার ছেলে সাইফুল্লাহ হাজেরী ওই এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনা করতেন। চলতি মাসে ওই এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান ও মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী।

এই ঘটনার পর ইসলামী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পাঠানো হয় এবং দুইজন প্রিন্সিপাল অফিসারকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গ্রাহকদের চাপ এবং ব্যাংকের ভাবমূর্তি রক্ষায় ফুলতলা শাখার কর্মকর্তারা সাইফুল্লাহ হাজেরীর বাবার কাছ থেকে একাধিক ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাইফুল্লাহ হাজেরী জানান, “মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ব্যাংকে গেলে আমাকে এজেন্ট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয় নিয়ে দোষারোপ করা হয়। আমি বলি, যদি আমরা টাকা আত্মসাৎ করতাম, তাহলে এত খোলামেলা চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া আমার বাবা জমি বিক্রি করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে চাচ্ছেন, ইতোমধ্যে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়েছেন। তারপরও আমাকে চাপে ফেলা হয়। একপর্যায়ে প্রিন্সিপাল অফিসার আশিক আমাকে স্টোর রুমে নিয়ে যান। সেখানে চোখ ও মুখ বেঁধে ৪-৫ জন মিলে আমার পায়ে হাতুড়ি দিয়ে মারধর করে এবং প্লাস দিয়ে নখ তোলার চেষ্টা করে।”

তিনি আরও জানান, “তারা আমাকে সাদা কাগজ, চেক এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে রাখে। চিকিৎসা শেষে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করব।”

সাইফুল্লাহর বোন ও মামা বলেন, “একজন মানুষের সঙ্গে ব্যাংকের ভেতর এমন অমানবিক নির্যাতন খুবই দুঃখজনক। এখন ব্যাংক কর্মকর্তারা ভুল স্বীকার করে উন্নত চিকিৎসার প্রস্তাব দিচ্ছে। আপাতত রোগীর চিকিৎসাই সবচেয়ে জরুরি, এরপর আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

ভুক্তভোগীর বাবা এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী বলেন, “গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ব্যাংকের অনুরোধে চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও দিয়েছি। তারপরও আমার ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”

ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় আমি ব্যাংকে ছিলাম না। কী হয়েছে বা কেন হয়েছে, সেটা আমি পরিষ্কারভাবে জানি না। তবে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

ইসলামী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুল বারী বলেন, “বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার রাতে জানতে পেরেছি। হাসপাতালে এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় লোক পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জেল্লাল হোসেন বলেন, “মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ নামে ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট ব্যাংকের মালিক ছিলেন শফিউল্লাহ হাজেরী। তার ছেলে সাইফুল্লাহ হাজেরী ওই ব্যাংক পরিচালনা করতেন। ব্যাংকের দুই কর্মচারী টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেলে, ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাইফুল্লাহকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর মামা থানায় মামলা করেছেন এবং আমরা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছি।”

এসএস/আরএন
সম্পর্কিত   বিষয়:  খুলনা   ফুলতলা  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close