সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নে বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশের পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
এ কমিটিকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে দলের একাংশ সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে গাছতলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
সূত্র জানায়, ২০ জুলাই রাতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে ধর্মপাশার ছয়টি ইউনিয়নের জন্য নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে পাইকুরাটি ইউনিয়নে মাহবুব মুর্শেদকে আহ্বায়ক এবং মো. হারুন-অর-রশীদ সরকারকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই ইউনিয়নের একটি অংশ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।
যদিও মাহবুব মুর্শেদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, তথাপি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে একটি সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠে আসে। এ ছাড়া নতুন কমিটির সদস্য মো. আঙ্গুর মিয়া ও মো. সবুজ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের জবাবে আঙ্গুর মিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটিতে ‘আঙ্গুর মিয়া’ নামে কেউ ছিলেন না। সেখানে ছিলেন অংকুর তালুকদার, যার বাবার নাম হামিদ ডাক্তার।”
মো. সবুজ চৌধুরী বলেন, “আমি কখনো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটিতে ছিলাম না। আমার বাবার নাম আব্দুর রাশিদ চৌধুরী, আর ওইসব অভিযোগে যে ‘সবুজ মিয়া’র কথা বলা হচ্ছে, তার বাবার নাম ছমেদ মিয়া।”
প্রতিবাদ সভায় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বলেন, এই কমিটি দলীয় আদর্শ ও সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পাইকুরাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাবেক যুবদল সভাপতি মোবারক হোসেন সেলিম। সভায় বক্তব্য দেন সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির প্রাক্তন সদস্য মো. সবুজ মিয়া, কারাবন্দি নেতা ও সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোখলেছুর রহমান, সাবেক যুবদল নেতা আমিনুল হক নয়ন এবং বিএনপি নেতারা নুরুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম বাবুল, সফিকুল ইসলাম ও নুরুল আমিন।
বক্তারা বলেন, “৫ আগস্ট যেভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, সেখানে অতীতে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তারা অবিলম্বে বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দাবি না মানলে আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে এবং উপজেলা পর্যায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. লিয়াকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “উপজেলা বিএনপির ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে ৫ জনের স্বাক্ষর ক্ষমতা রয়েছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ধর্মপাশার ছয়টি ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।”
একে/ েএসআর