সাভারে পূর্ব শত্রুতা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্র ও ইটপাটকেলের আঘাতে আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার রাতে সাভারের বনগাঁ ইউনিয়নের বেড়াইদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবু সাইদ (৫০) সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের মৃত মুনতাজ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় কৃষি কাজ করতেন।
আহতরা হলেন- জাবেদ, হিরু, সল্লিমুলা, বাবুল, আলিফ, আরাফাত, নজুমদ্দিন। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহত জাবেদ বলেন, 'রাত ৮টার দিকে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের বেড়াইদ এলাকায় সন্ত্রাসী জাকির ও তার বাহিনীর ৩০/৪০ জন লোক হামলা করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আবু সাইদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা লোহার রড, লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাকিব আল মাহমুদ শুভ বলেন, 'রাতে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও একই ঘটনায় আরও ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাবুল নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
এলাকাবাসীরা জানান, বুধবার রাতে বেড়াইদ এলাকার বিএনপি নেতা মো. বাবুল এলাকায় আসলে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জাকির হোসেন ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে বাবুলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবুলকে কোপাতে থাকে। তার চাচাতো ভাই কৃষক আবু সাইদসহ পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীরা তাকে বাবুলকে বাঁচাতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও এলোপাতারি কুপিয়ে আহত করে চলে যায়। পরে গুরুতর আহতদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কৃষক আবু সাইদকে মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপি নেতা বাবুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তার অত্যাচারে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, গত বছরের ০৫ অগাস্ট ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলে সন্ত্রাসী জাকির ভোল পাল্টিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সাইফের দলে যোগ দিয়ে তার অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় আধিপত্য ধরে রাখতে বুধবার রাতে পরিকল্পিত ভাবে বিএনপি নেতা বাবুলের উপর হামলা চালিয়েছে জাকির বাহিনীর সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, সন্ত্রাসী জাকির আওয়ামী লীগের লোক হওয়া সত্বেও তাকে সাথে নিয়ে ঘোরেন সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সাইফ। বর্তমানে এই সন্ত্রাসী জাকিরকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতা সাইফ উদ্দিন এলাকায় সরকারি খাস জমি দখল, খাল ও জলাশয় ভরাট করে হাউজিং প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। তার প্রভাবেই জাকির এলাকার সাধারণ মানুষসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বিরোধী মতকে দমন করতে সাইফ উদ্দিন সাইফ জাকিরকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।
তাই অবিলম্বে সন্ত্রাসী জাকির ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসী জাকির হোসেন ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা পলাতক রয়েছেন।
হামলার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী জাকিরের নাম্বারে একাধিক বার কল করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সাইফ বলেন, 'সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক আমি তার বিচার চাই। জাকিরের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে সাভারের সাবেক এমপি ডা. সালাউদ্দিন, যুবদল নেতা আইয়ুবসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও ছবি আছে। সে সবার মিছিলেই যায় এবং দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়। মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যা পুলিশের ওসি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানেন।'
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) হেলাল উদ্দিন বলেন, 'খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহত আবু সাইদের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
ওএফ/এমএ