অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, গার্মেন্ট শিল্পে বর্তমানে যারা বেকার হয়েছে তারা এমনি এমনি বেকার হয়নি, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। কোন শ্রমিককে বেকার করা আমার কাজ না। একজন শ্রমিক যদি কাজ না পায়, সে তো একা নয়, তার সাথে তার পরিবার জড়িত, তার বাচ্চারা জড়িত, তার ওয়াইফ জড়িত। কাজেই আমরা চেষ্টা করছি তারা যাতে কোনভাবেই বেকার না হয়।
শনিবার বিকেলে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সাভারে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা খারাপ অবস্থায় তারা কিন্তু বিজিএমইএর মেম্বার। তাদেরকে বলতে হবে এটা কি করবে। এতোদিন বিজিএমইএ ছিলো না, এজন্য শ্রম মন্ত্রণালয় এটার সাথে খুব বেশী জড়িত ছিলো। তাই যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোকে পরিচালনা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেমন ধরেন বেক্সিমকো। বেক্সিমকোকে পরিচালনা করার জন্য বিদেশী কিছু সংস্থা এখন বাংলাদেশে আছে। তারা হয়তো আলোচনা করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদি অবস্থা অনুকুলে থাকে তাহলে হয়তো তারা কারখানাটি পরিচালনা করবে।
`আপনারা ভালো করে জানেন, এদেশে অনেক মালিক আছে যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে মাসের পর মাস বিদেশে থাকে। তারা এই ফ্যাক্টরী দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তারা চলে গেছে। শ্রমিকদের কথা চিন্তাও করেনাই। এখন সেটা আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে। একটা ব্যাংক থেকে যদি ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেই কারখানা চলবে কিভাবে। ৫ হাজার, ৭ হাজার, ১০ হাজার কোটি টাকা, যাকেই ধরি, যে ব্যাংককেই ধরি মিনিমাম ১ হাজার কোটি টাকা টাকার নীচে কারও দেনা নাই। সেই জায়গাতে এখন যেহেতু ব্যাংক নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। ব্যাংকার টাকা দিতে চাচ্ছেন তাদের জায়গা-জমি বিক্রি করে আমরা চেষ্টা করছি ব্যাংকের জোগান দিতে।'
‘আপনারা জানেন ইতিমধ্যে আমি কয়েকজনকে পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের বাড়িঘর পর্যন্ত আমি নিয়ে এসেছি। তাদের জায়গা জমি বিক্রী করার মতো অবস্থা হচ্ছে। এটাতো বাংলাদেশে কখনও হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে রেড এ্যালার্ট জারি কারার জন্য আমি আবেদন জানিয়েছি। কাজেই যতটুকু করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি। কাজেই শ্রমিকদের বিষয়টি এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে।’
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন আমার কোন ইন্ড্রাষ্ট্রি নাই আমার কোন গার্মেন্টস নাই যে তাদের পক্ষ নিবো। আমি তাদেরই পক্ষ নিবো যারা ন্যায়-নীতির উপরে আছেন। আমাদের অনেক প্রকল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশ শ্রম আইনকে যোগপোযোগী করা। ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি আমরা অত্যন্ত শিথিল করেছি। কোন শ্রমিককে কোন মালিক কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবেনা এটাও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ক্ষমতাটি আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছেই রাখতে চাচ্ছি। প্রত্যেকটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নে নির্বাচনের মাধ্যমে সিবিএ নির্ধারিত হবে। তারাই সরকারের সাথে শ্রমিকদের পক্ষে দাবি দাওয়া উত্থাপন করবে এবং তারাই হবে বার্গেনিং এজেন্ট। আমরা আশা করি এখানে আপনাদের সহযোগীতা পাবো।
‘আমি শুধু কল-কারখনায় নয়, শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য যেখানে যেখানে ৫ জনের বেশী শ্রমিক কাজ করছে প্রত্যেককে এই আইনের আওতায় আনার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি এবং সেই হিসেবে কাজ হচ্ছে। প্রত্যেকটি সামাজিক ক্লাবসহ যেখানেই শ্রমিক আছে তাদেরকে বাংলাদেশ শ্রম আইনের নীচে আসতে হবে। তাদের শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ার দেখতে হবে। এবং তাদের লভ্যাংশের ০.৫ ভাগ শ্রমিকদের কল্যানে আমাদের যে তহবিল আছে সেই তহবিলে দিতে হবে।’
‘এই সরকার কতটা শ্রমিক বান্ধব সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আগে আপনারা কথা বলতে পারেননি, রাস্তায় নামতে পারেননি, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এমনকি লাঠিপিটাও হয়েছে। কাউকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি, সাবাই মালিকের পক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু আমি মালিকের পক্ষেও কাজ করতে চাই, শ্রমিকের পক্ষেও কাজ করতে চাই এবং শ্রমিক নেতাদের সাথে মিলে কাজ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, এভাবে সরকারের যখন পতন হয় তখন শুধুমাত্র সরকারের পতন হয়না এন্ট্রার্ন সোসাইটির পতন হয়। তাদেরকে তুলে ধরতে সময় লাগে। সেই সময়টা আমি আশা করি একটু ধৈর্য্য সহকারে সেই সময়টা ধরবেন। আমি যখন ৯ মাস আগে এই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করি প্রচন্ড শ্রমিক অসন্তোষ ছিলো বিভিন্ন কারনে। আমি বলেছিলাম আমি শ্রমিকদের পক্ষে এবং আমি শ্রমিকদের মতো একজন শ্রমিক। সেই কথা আমি রাখার চেষ্টা করেছি। আমি শ্রমিক-মালিক এবং নেতাদের সাথে মিলে কাজ করেছি এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি।
‘ছাত্র-জনতা এবং শ্রমিকরা তাদের রক্ত দিয়েছিলো একটি সুষম একটি সামঞ্জষ্যপূর্ণ সোসাইটি গড়ে তোলার জন্য। এটিই আমি করার চেষ্টা করছি। আপনারা জানেন শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য, বেতন দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর পিছনে এই মন্ত্রণালয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আছে আপনারা আশা করি সবাই সেটা জানেন। আমি শ্রমিক নেতাদের সাথে দুইবার আন্তার্জাতিক ওয়ার্কার্স সম্মেলনে গিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকদের পক্ষে আমি দাড়িয়ে কথা বলেছি।’
‘আমি শ্রমিক নেতাদেরকে অনুরোধ করবো আপনাদের যে কোন যৌক্তিক দাবির জন্য আমার মন্ত্রণালয়ের দরজা সবসময় খোলা আছে। কিন্তু যদি অযৌক্তিক কোন দাবি নিয়ে আমার মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে রাখবেন সেটা খুব খারাপ কথা। শ্রম মন্ত্রাণলয় ঘেরাও করে সেখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের উপর হামলা করা কোন যৌক্তিক দাবি হতে পারেনা। আমি যতদিন এই সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আছি আমি শ্রমিকদের নূন্যতম চাহিদা পূরণ করার জন্য রাস্তায় নামতেও রাজি আছি। আপনারা আমাকে বহুদিন ধরে চেনেন, আমি যে কথা বলি সে কথা রাখি। আমরা চেষ্টা করছি আপনাদের সককিছুর উন্নয়ন করার জন্য।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক জুলাই পুনর্জাগরন অনুষ্ঠান ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত শহীদদের স্মরনে শ্রমিক সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) আবদুল হাফিজ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিজ ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ৯ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া, জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিক সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এছাড়াও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধি, সাভার উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যক্তিবর্গ এবং সাভারের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকবৃন্দ।
ওএফ/এসআর