দুর্ধর্ষ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ত্রাস শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে কক্সবাজার আদালতের কোর্ট হাজতে মুঠোফোন সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যোর তদন্ত কমিটি গঠন কথা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কমিটির অন্য দুই সদস্যোর নাম পাওয়া যায়নি। অন্য একটি সূত্র বলছে, ঘটনার দিন দায়িত্বশীলদের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে।
গত বুধবার (৯ জুন) আদালতে হাজিরা দিতে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয় শাহীনকে। ঠিক তখনই তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন নজরে আসে কক্সবাজার থেকে পরিচালিত একটি মাল্টিমিডিয়া নিউজের ক্যামেরায়। এনিয়ে শুক্রবার ভোরে ওই মাল্টিমিডিয়া নিউজে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হয়। তা নিয়ে পুলিশ বিভাগসহ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আইন অনুযায়ী, আদালতে হাজিরা দিতে আসা আসামিদের শরীর তল্লাশি ও মোবাইলসহ প্রযুক্তি পণ্য বহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে বহু মামলার আসামি, হত্যা ও চোরাচালানের প্রধান অভিযুক্ত শাহীন ডাকাতের কাছে প্রকাশ্যে মোবাইল ফোন থাকা নিঃসন্দেহে কোর্ট পুলিশের দায়িত্বে চরম অবহেলা অথবা যোগসাজশের প্রমাণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতি হাজিরার সময় ৩০-৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে শাহীনকে মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ, হেফাজতে থাকা অবস্থায় দালাল ও সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে আলাপের সুযোগ করে দেওয়া হয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সে আদালতে এসেও চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনা কেবল একজন আসামির শিথিল নিরাপত্তা নয়, বরং গোটা কোর্ট পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় বড় প্রশ্ন তুলেছে আইনজীবীরা।
জানা গেছে, গত ৫ জুন সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য শাকের আহমদের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় শাহীন ডাকাতকে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে গরু ও মাদক চোরাচালানে সক্রিয় এই অপরাধী বহুবার অভিযানের মধ্যেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। অবশেষে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও আদালতে হাজিরার সময় তার এমন বিশেষ সুবিধা আবারও প্রশ্ন তুলেছে কারা তাকে রক্ষা করছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয় আইনজীবী এডভোকেট রমিজ আহমেদ জানান, এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় শুধুই পুলিশ বিভাগ নয়, গোটা বিচারপ্রক্রিয়া ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. গোলাম জিলানীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। যার কারনে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এএইচএসইউ/এসআর