খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের সেট ‘পদ্মা’ হলে কাশি দেন বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে বারবার কাশি দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থী ও দুইজন প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে চমকপ্রদ অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
রবিবার দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হোসাইন ব্রিফিং করে তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন।
পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হোসাইনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মামুন (৩৫) ২০১৮ সালে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের মাধ্যমে ইলেট্রোনিক্স ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলে সহকারি শিক্ষকের চাকুরি পান। পরে ২০২২ সালে মামুন একই উপজেলার চড়কডাঙ্গা গ্রামের করুণা কান্ত রায়ের ছেলে হর সুন্দর রায় সবুজ (৩০)কে একই কায়দায় প্রাইমারী স্কুলে সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরি নিয়ে দেন। চাকুরি পাওয়ার পর থেকে তারা দুইজন প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। ২০১৮ সাল থেকে মামুন এবং ২০২২ সাল থেকে হর সুন্দর রায় সবুজ চাকুরির প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। এরপর থেকে তারা প্রতিবছর প্রাইমারীর সহকারি শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন নিয়োগে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন ফাঁসসহ ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর বলে দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকুরি পাইয়ে দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ তারা খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলাকালে দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে ইলেট্রোনিক্স ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সময় বিরল উপজেলার সিঙগুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ রায়ের ছেলে কৃষ্ণকান্ত রায় (২৫) গ্রেফতার হয়।
পরে তার দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে শহরের ফকিরপাড়া স্বপ্নচুঁড়া ছাত্রাবাস থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্য মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ওই ছাত্রাবাস থেকে ২৪টি প্রবেশপত্র, ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ১০টি, ইলেট্রোনিক্স ডিভাইস ৫টি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, এই প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা প্রতিজন প্রার্থীকে চাকুরি নিয়ে দেওয়ার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা করে চুক্তি করেছেন। সে কাজে এই নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। তারা চাকুরির জন্য চুক্তি হওয়ার প্রার্থীদের এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্সের মূল সাটিফিকেটগুলো নিয়ে রেখেছে। নেওয়া হয়েছে স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেকের পাতা। সেই সার্টিফিকেট ও চেকের পাতাগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। এই চক্রের সঙ্গে ডাক বিভাগ সহ যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই চক্রটিকে ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। আমরা পুরোচক্রকে গ্রেফারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাছি।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রতারক চক্রের দুই সদস্য মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজ এ কাজ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে। বাড়ী ঘর জায়গা জমি ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে তুলেছেন। তারা যে চাকুরি করেন তা দিয়ে এত কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা সেগুলোও খতিয়ে দেখছি।
রবিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।
শনিবার সকাল ১০টায় সারাদেশের সঙ্গে দিনাজপুরে মোট ২৯টি কেন্দ্রে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে কৃষ্ণকান্ত রায় বার বার কাশি দিচ্ছিল। বিষয়টি ইচ্ছাকৃত মনে হওয়ায় এবং কিছুটা বিরক্তিকর লাগায় এবং আগে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিক্তিতে ডিভাইসসহ পরীক্ষার্থী কৃষ্ণকান্ত রায়কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিক্তিতে প্রশ্নফাঁসকারী শিক্ষক মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজকে গ্রেফতার করা হয়।
এএইচএম/এসআর