কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনেক পরিবার আগাম ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লাসহ চরগোরকমন্ডল এলাকার প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ভয়াবহতায় আতঙ্কে কাটছে তাদের দিনরাত। তারা দ্রুত টেকসই তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
চরগোরকমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা আলা বকস (৬৫) জানান, “ধরলার ভাঙনে ধরলা নদী এখন একেবারে আমার বাড়ির কাছেই। ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমার জীবনে কমপক্ষে পাঁচবার নদীগর্ভে বাড়িঘর হারিয়েছি। বর্তমানে শ্যালকের জমিতে নতুন ঘর করার চেষ্টা করছি, কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই করতে পারছি না।”
তিনি আরও জানান, আনন্দ বাজারে একটি ছোট সুতার ও রশির দোকান করে কোনোরকমে স্ত্রীসহ জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।
একই এলাকার জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম জানান, “নদী এখন আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে। যে কোনো সময় আমাদের ঘরবাড়িও নদীতে চলে যেতে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
স্থানীয় যুবক কামাল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, নুর আলম ও জাহিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জাবেদ আলী, মনসের আলী, আজিবর রহমান ও আজগর আলীর ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমির উদ্দিন ও আয়নাল হকের বাড়িও হুমকির মুখে।
চরগোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, “গত বর্ষায় ধরলার ভাঙনে ৩০টি পরিবার এবং প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা ও শত শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। তখন কর্তৃপক্ষকে জানালে মাত্র ৫-৬ হাজার জিওব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছিল, কিন্তু তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। এবারে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে মুজিব কেল্লাসহ স্কুল, মাদ্রাসা ও প্রায় ৫০০ পরিবার। বর্ষার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, “আমি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুতই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হবে।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, “গত বছর চরগোরকমন্ডলে ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে জিওব্যাগের মজুত নেই। চরগোরকমন্ডলে প্রচুর জিওব্যাগ প্রয়োজন। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এসি/আরএন