সারাজীবন কাঠমিস্ত্রির কাজ করে ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। অথচ জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ঠাঁই হয়েছে গোয়াল ঘরের এক কোণে। এমনই করুণ পরিণতি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বৃদ্ধ ময়দান আলী (৮০) ও তার স্ত্রী জাহেদা বেগমের।
ময়দান আলীর দুই ছেলে। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৫৭) উপজেলা ভূমি জরিপ দপ্তরের কর্মকর্তা এবং ছোট ছেলে রবিউল করিম রবি (৫৫) সফল মাছ চাষি। উভয়েরই পাকা ঘর ও আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে। অথচ তাদের মা-বাবা দিন কাটাচ্ছেন একটি অপরিচ্ছন্ন গোয়াল ঘরে, লাকরি, গরুর খাবার আর রান্নার চুলার পাশে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াল ঘরের ভেতরে কাঠের একটি পুরানো চৌকিতে শুয়ে আছেন ময়দান আলী। পাশে রান্নার সামগ্রী, খড়, ময়লা থালা-বাসন। গোয়াল ঘরের গন্ধে নিশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর।
বৃদ্ধ ময়দান আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সারাজীবন কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছি। মেয়েদের বিয়েও দিয়েছি। জমিজমা লিখে দেওয়ার পর এখন আমাদের এই গোয়াল ঘরই ঠিকানা।”
তার স্ত্রী জাহেদা বেগম (৭০) বলেন, “ছোট ছেলে রবি ৫ শতাংশ জমি বেশি নিয়েছে। আমি সে জমি ফেরত চাই। বড় ছেলের ঘরে যেতে চাইলে গালমন্দ করে। মেয়েরা দেখতে এলে ভাইয়েরা বকাঝকা করে। ঠিক মত খাবারও দেয় না।”
স্থানীয়রা জানান, ময়দান আলী আগে ছিলেন গৃহস্থ এবং কাঠমিস্ত্রি। ছেলেরা আজ প্রতিষ্ঠিত হলেও মা-বাবার খোঁজ রাখে না। বরং কেউ প্রতিবাদ করলে ছোট ছেলে রবি ‘দা’ নিয়ে হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজাউদ্দৌলা সুজা বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন বাবা সারাজীবন খেটে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, অথচ আজ তিনি গোয়াল ঘরে। আমি নিজে তাদের দেখতে যাব এবং পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, “অভিভাবক রক্ষণাবেক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রতিটি সন্তান মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বাধ্য। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ জন্মেছে। অনেকেই বলছেন, “এই সমাজে কি মা-বাবার আর কোনো মূল্য নেই?”
এমএ