শিশু রিক্তার বয়স মাত্র নয় (৯) মাস এবং ছেলে রুদ্র বালীর বয়স ৮ বছর। এতোটুকু বয়সেই পিতাহারা হয়েছে এই অবুঝ দুই শিশু। রোজ রাতে বিছানায় বাবার অপেক্ষায় থাকে তারা। বাবার সঙ্গে ঘুমাতে চায় দু’জনই। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙলে বাবাকে না পেয়ে কান্না করে এই এতিম ভাই-বোন। তাদের পিতা যে আর নেই, তা বোঝার মতো উপলব্ধি এখনও হয়নি তাদের।
এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের ঘটকের আন্দুয়া গ্রামে।
এ গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব বালী (৩২) দুরারোগ্য এক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ এপ্রিল মারা যান। রেখে যান বৃদ্ধা মা বকুল রানী (৭৫), স্ত্রী গীতা রানী এবং দুই সন্তানকে। বাবাহারা সন্তানদের একমাত্র আশ্রয়স্থল এখন অসহায় মা গীতা রানী। স্বামীকে হারিয়ে দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে নিয়ে দুঃসহ দিন কাটাচ্ছেন এই নারী। স্বামী বা বাবার বাড়ি কোনোটিতেই আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় শিশু সন্তানদের ভরণপোষণ ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বিধবা গীতা রানীর। সংসার চালাতে টাকার অভাবে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কোনো উপার্জন না থাকায় অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের।
এছাড়া প্রতিদিনই সন্তানরা বাবাকে দেখতে চায়। অবুঝ সন্তানদের এই আবদার মেটাতে না পারায় কষ্টের শেষ নেই গীতার। ছেলে রুদ্র বালী ঘটক আন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ফুটফুটে নয় (৯) মাস বয়সী শিশুকন্যাটিও সম্পূর্ণ সুস্থ নয়।
বিধবা গীতা রানী বলেন, “ঘরে আমার শ্বাশুড়ি বৃদ্ধা, তিনি কোনো সাহায্য করতে পারেন না, নিজেই চলতে পারেন না। ছেলে হারানো কষ্ট নিয়ে তিনি শ্মশানে গিয়ে কাঁদেন। কাঁদে পিতাহারা শিশুরাও। এসব সহ্য করতে পারি না। ছেলে বলে, ‘মা তুমি কেঁদো না, আমাদেরও কান্না পায়।’ এখন আর তাদের সামনে কাঁদি না, গভীর রাতে গোপনে সৃষ্টিকর্তার কাছে কাঁদি। স্বামী ছিল, তখন কোনো কষ্ট বুঝতাম না। অভাবের সংসার হলেও যেভাবেই হোক, তিনি দুই কেজি চাল ও বাজার সদাই নিয়ে আসতেন। আমার ছেলে এখনো রাতে বাবার অপেক্ষায় থাকে। বারবার জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা কবে আসবে?’ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাবাকে দেখতে চায় তারা। এই কষ্ট সহ্য করার মতো নয়। অকালে স্বামী চলে যাওয়ায় দুই সন্তান ও বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।”
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, “এই পরিবারকে দেখার মতো কেউ নেই। আমার বাবার পরিবারেরও আর্থিক অবস্থা ভালো না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। দুই সন্তানকে নিয়ে আমি যেন এক অকূল সাগরের মধ্যে আছি। আমার কোনো আর্থিক সংস্থান নেই। ছোট ছোট বাচ্চাদের রেখে কোথায় কাজ করব বা কীভাবে দিনগুলো পার করব, সেই চিন্তায় দিনরাত পার হচ্ছে না।”
একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বড় বোন জানান, “আমার ভাই হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত ৫ এপ্রিল মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে নানা টেস্ট করানোর পরও কোনো উন্নতি হয়নি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে ঢাকায় নেয়ার পথে আমার ভাই মারা যায়। ভাইয়ের সংসারে দেখার মতো আর কেউ রইলো না। অসহায় হলে যা হয়, আমাদের দিন এখন পান্থা ফুরানোর মতো অবস্থা। ভাইয়ের পরিবারটি সন্তানসহ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বর্তমানে ভিজিডি (ভিডাব্লিউডি) এর জন্য আবেদন করেছি। নাম তোলার জন্য স্থানীয় এক লোক ৫ হাজার টাকা চাচ্ছেন। টাকা না থাকলে নাম তোলা যাবে না। যদি সরকারি সহযোগিতা পেতাম, তাহলে পরিবারটি কিছুটা হলেও উপকৃত হতো।”
মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ আবুল বাসার নাসির হাওলাদার বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে।”
কেবি/আরএন