স্বৈরাচারের পথকে সুগম করার চেষ্টা না করার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, “এমন কোনো ফাটল তৈরি করবেন না, যেই ফাটল দিয়ে স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।”
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে না। এই বাংলাদেশ বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই কোনো ষড়যন্ত্র করে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ষড়যন্ত্র দেশে থেকেও হতে পারে, বিদেশ থেকেও হতে পারে। বিশেষ করে পলায়নরত স্বৈরাচার ও তার দোসররা আজও ষড়যন্ত্র করে কাউকে উসকানি দিতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তারা সফল হতে পারবে না।
এই দেশের মানুষ জেগে উঠেছে—জেনে গেছে কিভাবে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হয়। কাজেই গণতন্ত্রকামী মানুষের দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে—কোনো ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশে সফল হবে না। শেষ বিজয় হবে জনগণের।
সোমবার দুপুরে দিনাজপুর ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, “এই দেশ থেকে স্বৈরাচার বিতাড়িত করা হয়েছে। সেই ঐক্যের কারণেই বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। কিন্তু সেই ঐক্যের ভেতরে এখন কেউ কেউ ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। আমরা বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করতে চাই—এই বাংলাদেশ সবার। মনে রাখতে হবে, যার যার রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকতে পারে, কিন্তু সবার আগে বাংলাদেশ। গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের স্বার্থকে সকল রাজনৈতিক এজেন্ডার উপরে স্থান দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে বা যেই ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণতন্ত্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। কেউ যেন এমন চেষ্টা না করেন।
“আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের মধ্যে কারো কারো মনে প্রশ্ন থাকতে পারে—আমাদের জাতীয় সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু মনে রাখবেন, জাতীয় সনদ আজকের বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলিল। এটি সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে গ্রহণ করেছে এবং এতে স্বাক্ষর করেছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। দু’একটি দল এখনও বাকী আছে—তাদের প্রতিও আহ্বান জানাই, আপনারা গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছেন, অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, অনেকে গুম হয়েছেন। সেই রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে সংস্কার কমিশন কর্তৃক উত্থাপিত জাতীয় সনদকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে দলই জনগণের ভালোবাসায় শিক্ত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হোক না কেন, এই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা তাদের অবশ্যই করণীয়। কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ একবার যেহেতু ঐক্যবদ্ধ হতে শিখেছে, কেউ যদি মনে করে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে আবার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা করবে কিংবা সনদ থেকে সরে যাবে, তাহলে সেটা হবে গুরুতর ভুল। কারণ, মানুষ এখন জানে—কীভাবে গণতন্ত্র আদায় করতে হয়, কীভাবে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে হয়। তাদের বিশ্বাস রাখতে হবে জনগণের উপর। জনগণই আগামী সংসদ নির্বাচনে রায় দেবে। জাতীয় সনদের প্রতিটি অধ্যায় কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা আজ লেখা রয়েছে, এবং জাতি সেটি গ্রহণ করেছে।”
অনুষ্ঠানে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক একেএম মাসুদুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রেজাউর রহমান রেজার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক (স্থগিত) বখতিয়ার আহমেদ কচিসহ বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এএইচ/আরএন