নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আয়েশা বেগম ও আব্দুল দাইয়ান দম্পতির জীবন একসময় ছিল স্বচ্ছল। কিন্তু দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে এখন তাদের সংসার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ঢাকার দক্ষিণ শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাসের পর ২০২২ সালে সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। গ্রামে ফেরার তিন মাস পরই দুজনের শরীরে ধরা পড়ে ক্যান্সার—স্বামীর ফুসফুসে এবং স্ত্রীর জরায়ুতে। বর্তমানে তাদের একমাত্র ছেলে শহিদুল ইসলাম অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ঢাকায় থাকাকালে আয়েশা বেগম একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন, আর আব্দুল দাইয়ান রিকশাচালক থেকে রিকশার গ্যারেজের মালিক হয়ে ওঠেন। তাদের যৌথ আয়েই স্বচ্ছলভাবে চলছিল সংসার। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সেই সুখের দিন শেষ হয়ে যায়। প্রথমে আব্দুল দাইয়ানের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তার চিকিৎসা চলাকালীন কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আয়েশা বেগম জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরপর ব্যবসা ও চাকরি—সবকিছু হারিয়ে এখন তারা সহায়-সম্বলহীন। চিকিৎসার খরচ জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন বিত্তবানদের সহায়তার আশায় দিন গুনছেন।
আয়েশা বেগম জানান, তার স্বামী প্রায় ১০ বছর আগে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা চলার সময় চার বছর পর তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়ে যখন কিছুটা সুস্থতার পথে ছিলেন, তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন আয়েশা বেগম নিজেই। দেড় বছর চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তার জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত করেন। দীর্ঘদিন ভুল ওষুধ সেবনের কারণে তার বাম কিডনিও বিকল হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি ক্যান্সারের দ্বিতীয় ধাপে আছেন। চিকিৎসকদের মতে, তার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে অন্তত ৩৫টি কেমোথেরাপি প্রয়োজন। কিন্তু একটি থেরাপি নেওয়ার পর অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অন্তত ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলেছেন, সময়মতো চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু কর্মহীন স্বামী এবং নিজের অসুস্থতার কারণে এখন আয়ের সব পথ বন্ধ। ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসারের মৌলিক চাহিদাই মেটানো কঠিন। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কোনো রকমে বেঁচে আছেন তারা। সমাজের বিত্তবানদের কাছে তিনি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।
অসুস্থ আব্দুল দাইয়ান বলেন, “আমার অসুস্থতার পর স্ত্রীর অসুস্থতা আমাদের পরিবারকে পুরোপুরি অর্থকষ্টে ফেলে দিয়েছে। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা তো দূরের কথা, অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়।” তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সহযোগিতা পাঠানোর জন্য বিকাশ বা নগদ নম্বর: ০১৯১২০২৪৬৯৩।
এছাড়া, আয়েশা বেগমের নামে সোনালী ব্যাংক, সোনারগাঁও শাখাতে সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে—হিসাব নং: ৩৬১৮৬০১০২১০৪৫।
সোনারগাঁও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। জেলা কার্যালয়ের অনুমোদন শেষে সরকারি সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
এমএইচ/আরএন