নাটোরের গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মৃধার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে একটি মামলার অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড নাটোরের পুলিশ সুপারের দপ্তরে জমা দিয়েছেন অভিযোগকারী গোলাম রাব্বি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী রাসেল হোসাইনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক।
জানা গেছে, গত ১৫ মে গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজার এলাকায় স্থানীয় ইটভাটা ব্যবসায়ী ফরিদ মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লাকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা মারধর করে। এ ঘটনায় পরদিন ফরিদ মোল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্যবসায়ী রাসেল হোসাইনকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই আবু জাফর মৃধাকে।
রাসেল হোসাইনের দাবি, তিনি ঘটনার সময় দেশে ছিলেন না এবং ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু জাফর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাসেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবস্থাপক গোলাম রাব্বির কাছে ঘুষ দাবি করেন। গত ২ জুন রাতেও তিনি মোবাইলে ফোন করে পুনরায় পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
ফোনে ঘুষ দাবির পুরো কথোপকথন অডিও রেকর্ড করে রাখা হয়। সেই রেকর্ডে এসআই আবু জাফরকে বলতে শোনা যায়, “মামলা থেকে নাম বাদ দেব। পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। ঈদের আগে এক লাখ টাকা দিতে হবে। বাকি চার লাখ পরে দিয়েন। নাম বাদ দিতে হলে কয়েকটা দপ্তর আছে ভাই, বোঝেন তো। এমনও হতে পারে এসপি স্যার, সার্কেল স্যার ডাকতে পারে। ওসি স্যার তো ডাকবেই। সব ওসি স্যারের নলেজে করতে হবে ভাই।”
এই বক্তব্য রেকর্ড করে নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেন গোলাম রাব্বি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “রাসেল ভাই দেশে না থাকলেও তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এসআই আবু জাফর প্রথম থেকেই আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন, এখন আবার খোলাখুলিভাবে টাকা চাচ্ছেন।”
অভিযুক্ত এসআই আবু জাফরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো ধরনের ঘুষ দাবি করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কেন টাকা চাইব?” তবে ঘুষ দাবির অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে আছে জানানো হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অন্যদিকে মামলার বাদী ফরিদ মোল্লা বলেন, “ঘটনার সময় রাসেলের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী সেখানে ছিল, তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।” তিনি মামলায় রাসেলকে যুক্ত করার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অডিও রেকর্ড সহ অভিযোগ পেয়েছি। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রমাণ হিসেবে অডিও রেকর্ড সংযুক্ত হওয়ায় পুলিশের ভাবমূর্তি ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এমআই/এসআর