কুড়িগ্রামের রাজারহাটে টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর। ডুবে গেছে উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেতসহ চরাঞ্চলের বাদাম, পাট ও রবিশস্য। নিম্নাঞ্চলে উঠতি ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েকদিন পানির নিচে থাকায় ধান গাছগুলোতে পচন ধরেছে।
তারপরও আশায় বুক বেঁধে কোমর পানি ডিঙিয়ে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটছেন কৃষকরা। এবারে শুধু ধান ও চাল নয়, ধানের খড়েও পচন ধরায় গরুর খাবারের সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্যদিকে, তিস্তার চরাঞ্চলে জমে থাকা পানিতে ডুবে যাওয়া অপরিপক্ক বাদামসহ অন্যান্য রবিশস্য তুলে নিচ্ছেন কৃষকরা। আলুর পরে বাদামেও ক্ষতির মুখে পড়ায় বড় ধরনের লোকসানের শিকার হচ্ছেন তারা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শনিবার (২৪ মে) সকালে উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের পাঠক গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে থইথই করছে। ডুবে গেছে উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেত। এসব দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। অনেকেই বলছেন, বৈরী আবহাওয়ায় এবারে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
চাকিরপশার গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া (৪৫) বলেন, "৫ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগিয়েছি। ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে সব ধানক্ষেত পানির নিচে। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।"
একই এলাকার কৃষক হান্নান বলেন, "২ একর জমির ধান পানির নিচে। কামলা না পেয়ে নিজেই কোমর পানি ডিঙিয়ে ধান কাটছি।"
কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, "বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে পানির নিচের ধান কেটে নিচ্ছি। কয়েকদিন পানির নিচে থাকায় প্রায় সব ধান পড়ে গেছে।"
বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কৃষকরা সেখানে অপরিপক্ক বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য ফসল পানি থেকে সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২,২৪৫ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ১২,২৫০ হেক্টর। এছাড়াও পাট ৩৯২ হেক্টর, তিস্তা নদীর চরে চিনাবাদাম ১৭৫ হেক্টর, পাট ২০ হেক্টর, মরিচ ৩ হেক্টর, শাকসবজি ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল, খাল-বিলের উঠতি ইরি-বোরো ধান ও রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষকরা জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া চিনাবাদাম ও কাউন উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন তারা।
অনেক কৃষক অভিযোগ করেন, চরের অনেকেই ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছিলেন। এখন জমি তলিয়ে যাওয়ায় কী দিয়ে ঋণ শোধ করবেন, সে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। বদ্ধ পানির কারণে সাময়িকভাবে উঠতি ধান ও বাদামের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
পিএম/আরএন