মুরাদনগরে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগে কথিত এক অনলাইন অ্যাক্টিভিটিসের নামে কুমিল্লার আদালতে পৃথক ৫টি মামলা হয়েছে।
অভিযুক্ত রাজিব আহমেদ (৩৮) উপজেলার ১৫ নং নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে। মামলায় রাজিবের বিরুদ্ধে সন্মানিত মানুষের চরিত্র হনন ও হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১নং আমলী আদালতে প্রথম মামলার বাদী মোল্লা গোলাম মহিউদ্দিন (৬৫) মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে।
মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ঢাকায় তিনি গার্মেন্টস ও পরিবহন ট্রান্সপোর্টসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ৩১ জানুয়ারি তার গ্রামের বাড়ি রামচন্দ্রপুরে তার বাসায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত রাজিব আহমেদসহ কতিপয় ব্যক্তি তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। কিন্তু তা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি একটি ভুয়া আইডি থেকে আমার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে। যা আমার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে।
কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, মূলত মুরাদনগরের গণমানুষের নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১নং আমলী আদালতে রাজিব আহমেদের নামে দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন মুরাদনগর উপজেলার দিঘলদী গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মো. বাবুল মিয়া (৬৫)।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় রামচন্দ্রপুর বাজারে অবস্থিত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিয়াম ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিবের নেতৃত্বে কতিপয় ব্যক্তি তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু আমি তাদের অনৈতিক চাওয়া পূরণে অস্বীকৃতি জানাই। তখন তারা আমার খবর আছে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আমাকে ও মুরাদনগরের পাঁচবারের সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।
ব্রিফিংয়ে তিনি আসামি রাজিবের গ্রেফতার দাবি করেন।
কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১নং আমলী আদালতে অভিযুক্ত রাজিব আহমেদের নামে তৃতীয় মামলাটি দায়ের করেন মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজারর থানার আলালের কান্দি গ্রামের মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন (৫১)।
মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৮ জানুয়ারি মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারের অবস্থিত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিব ও তার কতিপয় সহযোগী বলেন এখানে ব্যবসা করতে হলে আমাদেরকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় তুই ও তোর নেতা কায়কোবাদের খবর আছে। কিন্তু আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ক্ষেভের বশবর্তী হয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আমাকেসহ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মুরাদনগর থেকে নির্বাচিত পাঁচবারের সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালায়। যা আমাদের দীর্ঘ দিনের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১নং আমলী আদালতে অভিযুক্ত রাজিব আহমেদের বিরুদ্ধে চতুর্থ মামলাটির বাদী মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কাঁঠালিয়াকান্দা গ্রামের মৃত মো. তালেব হোসেনের ছেলে জয়নাল আবেদীন (৪৮)।
মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। গত ১ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর বাজারে অবস্থিত আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির টেলিকমে এসে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন রাজিব ও তার সহযোগীরা। এ সময় আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় আমিসহ আমার অভিভাবক মুরাদনগরের নেতা কাজী মোফাজ্জল হোনাইন কায়কোদের খবর আছে। এ সময় আমি প্রতিবাদ করলে ও চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তার পরিচালিত একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে আমার নাম ও কায়কোবাদ দাদার বিরদ্ধে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালায়। যা আমাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে।
কুমিল্লার সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটের ১০ নং আমলী আদালতে কথিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস রাজিব আহমেদের নামে আদালতে পঞ্চম মামলাটি করেছেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৈকরই গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৮)।
মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি একজন সংবাদকর্মী। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গণমুক্তির স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লার স্বনামধন্য সাপ্তাহিক পত্রিকা আমোদ ও গোমেতি সংবাদের প্রতিনিধি এবং জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল আকাশ টিভির সম্পাদক পদে রয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে রাজিব আহমেদ তার একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে উদ্দেশ্যমূলক কন্টেন্ট তৈরি করে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার এরূপ কর্মকাণ্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা চলমান রয়েছে। যার নং-৩। তারিখ ০৫-০১/২৫ ধারা-১৪৩/৩৪১,৪৪৭/৩৮৫/৫০৬ (২)/৩৪। যা তদন্তাধীন।
এর বাইরেও বাঙ্গরা বাজার থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে মুরাদনগরের গুঞ্জর গ্রামের হাজী সোনা মিয়ার ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া কন্টেন্ট তৈরি করে তাকে সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জহিরুল ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও বিভিন্ন হুমকি-ধামকী দেন। এ ঘটনায় কারণে আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাবোধ করছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাজিবের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন সাংবাদিক মহিউদ্দীন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজীব আহমেদ বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে। মূলত অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় একটি পক্ষ তাকে হয়রানি করছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এমকেএল/এসআর