হোয়াইট হাউসে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। দুপক্ষই বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং নিউইয়র্ক নগরের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
অতীতে পারস্পরিক কঠোর সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বৈঠকের পর ট্রাম্প ও মামদানি দুজনেই জানান, ভবিষ্যতে তারা গঠনমূলক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। শনিবার (২২ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
শুক্রবারের বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মামদানির প্রশংসা করেন ট্রাম্প। যদিও নিজের মুসলিম পরিচয়ের কারণে অতীতে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মামদানি। সেই সময় ট্রাম্প তাকে ‘জিহাদিস্ট’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন এবং তার মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের হুমকিও দিয়েছিলেন। তবুও এবার ট্রাম্প তার নির্বাচনী সাফল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকারকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দারুণ ও অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি বৈঠক হয়েছে। আমাদের মধ্যে অন্তত একটি মিল আছে— আমরা দুজনেই চাই আমাদের প্রিয় শহর নিউইয়র্ক ভালো থাকুক।’
নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা ট্রাম্প আরও বলেন, ‘মামদানি দারুণভাবে নির্বাচন করেছেন এবং সহজেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়েছেন।’
জবাবে মামদানি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠককে সাধুবাদ জানাই। তিনি যেমন বলেছেন, বৈঠকটি ফলপ্রসূ ছিল; আলোচনা হয়েছে আমাদের দুজনেরই ভালোবাসার শহর নিউইয়র্ককে কেন্দ্র করে।’
এ ছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ভাড়া, জ্বালানি বিল ও বাজারমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয়সংক্রান্ত নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মামদানি।
আল জাজিরা জানায়, ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী মামদানি বরাবরই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। এসব অবস্থান ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে বড় ধরনের অমিল তৈরি করে। এর পাশাপাশি অভিবাসন ইস্যুতেও ট্রাম্প বরাবরই অভিবাসীদের নিরাপত্তাহুমকি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
অভিবাসন নীতি ও অন্যান্য বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্য নিয়ে জানতে চাইলে মামদানি বলেন, মতভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যৌথ লক্ষ্য অর্জনে তারা একসঙ্গে কাজ করতে চান।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনি এক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন যেখানে সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা ও বিদেশে মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। এখন তিনি আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ বন্ধ করা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর মতো বিষয়ে দুপক্ষই একক অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।
মামদানি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি— দুজনেই নিজেদের অবস্থান খুব পরিষ্কারভাবে জানি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আজকের বৈঠক আমাদের মতবিরোধ থেকে নয়; বরং নিউইয়র্কবাসীর সেবায় আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ৮৫ লাখ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে— যারা বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটে আছেন, যেখানে প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পও জীবনযাত্রার ব্যয় ইস্যুতে মামদানির মনোযোগকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরছেন— যদিও অতীতে তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ ছিল।
ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেছেন, আমার অনেক ভোটারই তাকে ভোট দিয়েছেন। আর এতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।’
আরএন