সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের বেড়াইদ এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কৃষক আবু সাঈদকে কুপিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবীতে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। এসময় তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়াপুর এলাকার রাস্তায় অবস্থান নিলে প্রায় আধা ঘন্টার মতো সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীরা এসময় ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল মিঞার প্রত্যাহার দাবি করেছেন।
রোববার দুপুরে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসীরা। এর আগে গত বুধবার রাতে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের বেড়াইদ গ্রামে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বনগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের যোগসাজসে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্ত্রাসী জাকির ও তার বাহিনীর লোকজন কৃষক আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের ৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তারা বলেন, এমপি, মন্ত্রী ও সরকারী কোন কর্মকর্তার সাথে এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটলে আসামীদেরকে মূহুর্তের মধ্যে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ পাবলিক আছি আমাদের কেউ এভাবে মারা গেলে আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করতে এত কালক্ষেপণ কেন? প্রশাসনের কাছে এমন প্রশ্নের জবাব চেয়ে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান মানবন্ধনকারীরা। আর যদি আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে প্রয়োজনে ঢাকার রাজপথে গিয়ে বিক্ষোভ করার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।
আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে এসময় নিহতর পরিবার আত্মীয়-স্বজনসহ শত শত গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও এলাকাবাসীর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও মানবন্ধনে অংশ নেন।
নিহতের বড় ভাই অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন সাভার মডেল থানার ওসি নিজে এসে সন্ত্রাসী জাকিরের বাড়িতে দাওয়াত খায়। এদিন জাকির গ্রুপের মাধ্যমে আমার ভাইকে ডেকে আনে সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মৃঞা। ওসি চলে যাওয়ার ২০ মিনিট পরেই আমার ভাই হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওসির যোগসাজশ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওসি জুয়েল মিঞাকে প্রত্যাহারসহ আসামীদের গ্রেপ্তার করা না হলে মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিহত আবু সাঈদের স্ত্রী জোহরা খাতুন, সন্ত্রাসী হামলায় আহত সলিম উল্লাহ, আমান উল্লাহ, মোস্তফা মিয়া, লাল চান, সাইফুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও নিহতের দুই ছেলে জাহিদ হোসেন এবং আলী হোসেন প্রমুখ।
ওসির পৃষ্ঠপোষকতায় জাকির বাহিনীর হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, সাভার থানার ওসি শুধু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। ওই এলাকায় সাভার থানার কোন জমিজমা নেই যে, ওইখানে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কিছু আছে। তাদের দু'পক্ষের সাথে আগে থেকেই বিরোধ ছিল এবং তাদের দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও ছিলো দীর্ঘদিনের।
প্রসঙ্গতঃ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ২২ শে অক্টোবর রাত নয়টার দিকে বনগাঁও ইউনিয়নের বেড়াইদ এলাকায় বিএনপির ৪নং ওয়ার্ড শাখার দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদকে দলবল নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সমর্থক জাকির ও তার লোকজন। এ ঘটনায় ২৩ শে অক্টোবর সাভার মডেল থানায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এঘটনায় হত্যাকারী আওয়ামী লীগ সমর্থক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির হোসেনসহ মামলার অন্যান্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
ওএফ/এসআর