পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের চর ঈশান এলাকায় ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া প্রায় ৫০০ একর জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসি।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের তালতলি বাজার এলাকায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে তারা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মাসুম বিল্লাহ ওরফে হাজী পলাশ। তিনি বাউফল পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, গত সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে একটি দল মাটি খনন যন্ত্র দিয়ে তাদের জমির মাটি কাটতে শুরু করে। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন সেখানে গিয়ে দেখতে পান ৩০-৪০ জনের একটি দল হাতে দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। তারা (দখলকারী) জানান, হাজী পলাশ চরের মাটি কাটতে বলেছেন। এ সময়ে প্রাণনাশের ভয়ে ভুক্তভোগীরা তর্ক না করে ফিরে আসেন। পরের দিন মঙ্গলবার তারা (ভুক্তভোগীরা) ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা শোনেননি। পরে বুধবার সকালে ভূমিহীন কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে ওই চরে গিয়ে ১৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্দোবস্ত পাওয়া কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর ঈশানের প্রায় পাঁচশ একর জমি ১৪১ জন ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা চাষাবাদ করে আসছিলেন। তিন-চার মাস ধরে হাজী পলাশের নেতৃত্বে কয়েকজন ভূমিদস্যু ওই জমি দখলের চেষ্টা করছে। বাস্তবে তারা কেউ ভূমিহীন না।
১৯৫৪ সালে বন্দোবস্ত পাওয়া কৃষক মো. মোসারেফ হোসেন বলেন, চর ঈশানের জেএল নম্বর ৬৬ এবং ৪৮ নম্বর খতিয়ানের ৩৫ ও ৩৬ দাগের ৫ একর জমি তিনি বন্দোবস্ত পেয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। সম্প্রতি সেই জমি ভূমিদস্যুদের নজরে পড়েছে। ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক সেই দখল করার পায়তারা করছে।
মোসা. কহিনুর বেগম (৬০) নামে এক নারী বলেন, তাদের থাকার ভিটি পর্যন্ত নাই। এ কারণে তার ও তার স্বামী সুলতান হাওলাদারের নামে সরকার ২০০১ সালে চর ইশানের ১ একর জমি বন্দোবস্তো দেয়। সরকারিভাবে সেই জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে তারা চাষাবাদ করে আসছেন। সেই জমি একটি ভূমিদস্যু মহল দখল করার চেষ্টা করছে।
তার স্বামী সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘সরকার আমার নামে কাগজ দিছে, জমি আমার। জীবন দেব, তবু জমি ছাড়বো না।’
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাজী পলাশ বলেন, ‘তিনি কিংবা তার কোনো লোক চর ঈশানের জমি দখল করতে যাননি। যতটুকু জেনেছেন, নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির লোকজন আদালতের ডিগ্রী বলে ওই জমি দখলে নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্য না।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, ‘সেদিন (২২ অক্টোবর) দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এক পক্ষের হাতে আটকৃতদের নিয়ে আসে। লিখিত কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব ভূমিহীনদের নামে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের জমি ভোগ দখল করবেন। তবে যেহেতেু ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে, তাই কাগজপত্রের সঠিকতা নিরুপন করে দ্রুত সময়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে।’
এএস/এসআর