ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে দিনাজপুরে আদালতে নাশকতার মামলা দায়ের করেছেন মো. হায়াত আলী (৩১) নামে এক ‘জুলাই যোদ্ধা’। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে দিনাজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ মামলা করেন। পরে আদালতের বিচারক মো. সামিউল ইসলাম, বাদীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী মো. হায়াত আলী দিনাজপুর সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর গ্রামের মো. সানাউল্লাহর ছেলে।
আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দিনাজপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার অন্যতম আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক মো. মমিনুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ শাহ আলম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, শংকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোকছেদ আলী রানা, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ ইকবাল কলিংস, সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান নওশাদ, দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র তৈয়ব আলী দুলাল এবং পরিবহন শ্রমিক নেতা শেখ বাদশা।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, গত বছর ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দিনাজপুর শহরে সংঘটিত ঘটনাগুলোর সাক্ষী হিসেবে একাধিক ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বাদী হায়াত আলীর অভিযোগ, গত বছর ৪ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিনি ও অন্যান্য জুলাই যোদ্ধারা দিনাজপুর শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল (সদর হাসপাতাল মোড়) থেকে তৎকালীন হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসা ও আদালত এলাকা পর্যন্ত একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় অভিযুক্তরা দেশি অস্ত্র-শস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং ইট-পাটকেল ও গুলি ছুড়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে। এতে বহু ছাত্র-জনতা আহত হন এবং গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহেলা করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বাদী আরও বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বাইরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র রবিউল ইসলাম রাহুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হায়াত আলী নিজেও গুরুতর আহত হন এবং পরে ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর তিনি বাড়িতে থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধা’।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর তিনি প্রথমে দিনাজপুর সদর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন, কিন্তু তিন মাস পার হলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।
এ বিষয়ে দিনাজপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এএইচ/আরএন