বরগুনার আমতলীর মফিজ উদ্দিন তালুকদার বালিকা বিদ্যালয়ের সাড়ে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ৬টি ভবনের সবগুলোই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে, এবং পরের বছর ১৯৬৬ সালে ৪ কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি মূল ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে রয়েছে একটি হলরুম, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস, শিক্ষক মিলনায়তন এবং একটি কম্পিউটার ল্যাব।
ভবনটি নির্মাণের পর থেকে আর কোনো সংস্কার না করায় ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং অনেক জায়গায় ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ায় ভবনের কক্ষে বসে শ্রেণি নেওয়া যায় না। কম্পিউটার ল্যাব কক্ষটি প্রতি বছর বর্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। প্রধান শিক্ষক ও অফিস কক্ষসহ সব কক্ষেরই একই অবস্থা।
১৯৭২ সালে নির্মিত ২ কক্ষের একটি টিনসেড কক্ষ ৫ বছর আগে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর পাশেই একটি দোতলা টিনসেড বিজ্ঞানাগার ভবন রয়েছে, সেটিও একই কারণে তালাবদ্ধ। ছাউনির টিন দিয়ে পানি পড়ায় বিজ্ঞানাগারের সব মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে ৩ কক্ষ ও ২ কক্ষ বিশিষ্ট আরও দুটি ভবন রয়েছে। পূর্ব পাশে রয়েছে ৫ কক্ষবিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন, যা ২০০২ সালে নির্মিত হয়। তবে এসব ভবনেরও একই অবস্থা — দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে এবং ছাদে ফাটলের কারণে পানি পড়ে। বর্ষায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো বসতে পারে না।
মেঝেতে গর্ত হয়ে বড় বড় খাদ তৈরি হয়েছে। পূর্ব পাশের দোতলা ভবনটিতে নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে অল্প সময়েই এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভবনটি এতটাই নাজুক যে শিক্ষার্থীরা ভয়ে দোতালায় উঠতে চায় না।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধান শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীর জন্য দুটি টিনসেডের ঘর রয়েছে, সেগুলোও জরাজীর্ণ। বসবাসকারীরা নিজেদের খরচে কোনওরকমে তা ঠিক করে বাস করলেও ঝুঁকি রয়েই গেছে।
নারী শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। শহরের প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় বাইরের লোকজনের নজরে পড়ার ভয়ে ছাত্রীদের খেলাধুলা করতে সংকোচ বোধ হয়। প্রাচীর না থাকায় অবাধে গবাদি পশু বিদ্যালয় মাঠে প্রবেশ করে মাঠ নষ্ট করছে। রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আড্ডার স্থানেও পরিণত হয়েছে মাঠটি।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া, শাহানা ও মৌরি বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদ, দেয়াল ও পিলারের পলেস্তারা খসে পড়ে। বর্ষায় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।”
৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিয়া ও ফহিমা বলেন, “আমরা ভয় নিয়ে ক্লাস করি। বর্ষাকালে ঠিকমতো বসে ক্লাস করাই যায় না।”
বিদ্যালয়টি আমতলীর প্রাক্তন এমএলএ মরহুম মফিজ উদ্দিন তালুকদার ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কবীর বলেন, “বিদ্যালয়ের ছয়টি ভবনের সবগুলোই এখন ব্যবহার অনুপযোগী। ছাদ, দেয়াল ও পিলারের পলেস্তারা খসে পড়ায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস করছে। আমরা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।”
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, “শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ের ভবনের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এসকে/আরএন