রাজধানীর মুগদা থানার মান্ডা এলাকায় ভয়ংকর এক সস ও আচার তৈরির ফ্যাক্টরির সন্ধান পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের উপকরণ, বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল, কয়েক প্রকারের ইন্ডাসট্রিয়াল কালার ব্যবহার করে নিন্মমানের সস, টেস্টিং সল্ট, সয়া সস, ভিনেগার, অরেঞ্জ জেলি, আচার সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনের অভিযোগে এসএন ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সিলগালা করেছে ভোক্তা অধিকার।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মান্ডার বটতলা এলাকায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
অভিযানে দেখা যায়, দুর্গন্ধযুক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের কাঁচামাল, ফাঙ্গাসযুক্ত তেতুল, ক্ষতিকর কেমিক্যাল, ইন্ডাসট্রিয়াল কালার দিয়ে ডিমান্ড সয়াসস, চিলি সস, হট টমেটো সস, টেস্টিং সল্ট, ভিনেগার, অরেঞ্জ জেলি, আচার প্রস্তুত করা হচ্ছে। তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছিল সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে—মেঝেতে ফেলা কাঁচামাল, খোলা ড্রামে মিশ্রণ, মিশ্রণের মধ্যে পোকামাকড় পড়েছিল। অভিযানে কয়েক প্রকার ক্ষতিকর ইন্ডাসট্রিয়াল কালার জব্দ করা হয়।
অভিযানে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, কোনো উৎপাদন লাইসেন্স বা বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়াই এসব খাদ্যপণ্য বাজারজাত করা হচ্ছিল। লেবেলে কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ক্রেতাদের ধোঁকা দিচ্ছিল কারখানার মালিক।
উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, “এসএন ফুড প্রোডাক্টস নামের এই প্রতিষ্ঠান চার প্রকারের ইন্ডাসট্রিয়াল কালার ব্যবহার করে কয়েক প্রকারের সস, টেস্টিং সল্ট, ভিনেগার, অরেঞ্জ জেলি, আচার তৈরি করছিল। অভিযান চলাকালে তাৎক্ষণিক বিএসটিআই বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এই কারখানার অবস্থা ছিলো ভয়ংকর। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, ক্ষতিকর সব কেমিক্যাল, রং এবং পঁচা, নষ্ট কাঁচামাল দিয়ে খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে, তা কল্পনাতীত। আমরা সঙ্গে সঙ্গে কারখানাটিকে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি এবং কারখানাটি সিলগালা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে যারা এমনভাবে খেলছে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বাজারে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
অভিযানকালে কারখানা থেকে বিভিন্ন কেমিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার ও ভেজাল সস জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জনগণের অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া একটি লাইভ বেকারিকে ২০ হাজার টাকা এবং একটি ফার্মেসীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার।