আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহীর রাজনীতি ক্রমেই সরগরম হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপির ছয়টি আসনেই মনোনয়ন দৌড় ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দলের এই বিপরীত চিত্র রাজশাহীর নির্বাচনী সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজশাহীতে মোট ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে—রাজশাহী–১ থেকে রাজশাহী–৬ পর্যন্ত। নয়টি উপজেলা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা মিলিয়ে এই আসনগুলোর আওতা গঠিত।
জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা: ছয় আসনে চূড়ান্ত তালিকা
গত রোববার রাতে রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে মজলিশে শুরার অধিবেশনে ছয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তালিকা ঘোষণা করেন সংগঠনের রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আশরাফুল আলম বলেন, এটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা:
রাজশাহী–১ (গোদাগাড়ী–তানোর): অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির
রাজশাহী–২ (সদর): রাজশাহী সদরে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
রাজশাহী–৩ (পবা–মোহনপুর): অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
রাজশাহী–৪ (বাগমারা): আবদুল বারী সরদার, জামায়াতের রোকন
রাজশাহী–৫ (পুঠিয়া–দুর্গাপুর): মো. নুরুজ্জামান লিটন, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি
রাজশাহী–৬ (বাঘা–চারঘাট): অধ্যক্ষ নাজমুল হক, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি
বিএনপিতে মনোনয়ন দৌড় ও কোন্দল
রাজশাহীর ছয়টি আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন এখন প্রকাশ্য। অন্তত চার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। দলীয় নেতারা একে ‘গণতান্ত্রিক চর্চা’ বলে দাবি করলেও অনেকেই মনে করছেন, এতে নির্বাচনী প্রস্তুতি বিঘ্নিত হতে পারে।
রাজশাহী–১ (গোদাগাড়ী–তানোর)
সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি এই আসনে। স্থানীয় কর্মী গণিউল হক ও কৃষক দল নেতা নেকশার আলীর নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, সাজেদুর রহমান মার্কনি, অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব ও প্রকৌশলী কেএম জুয়েল।
শরীফ উদ্দিন ও তারেকপন্থিদের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা সত্যি আছে, তবে শেষ পর্যন্ত আমরা দলীয় সিদ্ধান্তই মেনে মাঠে নামব।”
রাজশাহী–২ (সদর):
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত দুই প্রবীণ নেতার মধ্যে—সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা। দলীয় সূত্র বলছে, ‘ক্লিন ইমেজ’ ও অভিজ্ঞতার কারণে মিনু এখনো এগিয়ে।
রাজশাহী–৩ (পবা–মোহনপুর):
মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন তিনজন—অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রায়হানুল আলম রায়হান ও নাসির হোসেন (সাবেক প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে)। মিলন বলেন, “বিএনপি বড় দল, প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তবে আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ নেই।”
রাজশাহী–৪ (বাগমারা):
মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন—ডিএম জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক কামাল হোসেন, রেজাউল করিম টুটুল ও ডা. আশফাকুর রহমান শেলী। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ডিএম জিয়া বলেন, “অসুস্থ প্রতিযোগিতা দলের জন্য ভালো নয়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।”
রাজশাহী–৫ (পুঠিয়া–দুর্গাপুর):
সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন এই আসনে—অন্তত আটজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক, মাহমুদা হাবিবা, গোলাম মোস্তফা, রুকুনুজ্জামান আলম, সিরাজুল করিম সনু, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল, জুলকার নাঈম মোস্তফা ও ইশফা খায়রুল হক শিমুল। মে মাসে দলীয় কোন্দলে বিএনপি কর্মী হাসিবুল ইসলাম নিহত হন। যুবদল নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, “প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক, কিন্তু সবাইকে শালীনতা বজায় রাখতে হবে।”
রাজশাহী–৬ (বাঘা–চারঘাট):
মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সাঈদ চাঁদ, নুরুজ্জামান খান মানিক, আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, দেবাশীষ রায় মধু, গোলাম মোস্তফা মামুন ও বজলুর রহমান। এখানেও তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিযোগিতা তীব্র।
এসআর